সংস্কার কাজ করতে তিন মাসের জন্য বন্ধ করা হয়েছে । সেতু বন্ধ করে গতকাল থেকে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। প্রথম দিন গতকাল ১টি ফেরি চালু করা হয়েছে। আর প্রথম দিনেই সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন দুই পাড়ের যাত্রীরা। জোয়ারের পানিতে অ্যাপ্রোচ রোড ডুবে যাওয়া, টোল আদায়ের জন্য ইজারাদার না পাওয়ায় দীর্ঘ যানজট হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং বিকালে যখন জোয়ার ছিল তখন দুর্ভোগ পোহায় মানুষ। গতকাল সকালে ফেরি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উভয় পাড়ে ছোট–বড় গাড়ির দীর্ঘ সারি। ফেরিতে ওঠার জন্য নির্মিত অ্যাপ্রোচ রোড হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে ফেরির টোলের হার নির্ধারণ করা হলেও টোল আদায়ের জন্য ইজারাদার পায়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজ। ৪ দফা টেন্ডার আহ্বান করা হলেও অল্প সময়ের জন্য লাভজনক হবে না ভেবে কোনো প্রতিষ্ঠান তাতে অংশ নেয়নি। তাই সওজ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টোল আদায় করছে। তাদের জনবল না থাকায় গাড়ির কাছে গিয়ে টোল আদায় করতে পারছে না। গাড়ির চালক বা হেলপারকে গাড়ি লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্দিষ্ট কাউন্টারে গিয়ে টোল দিতে হচ্ছে। এর ফলে ফেরিতে ওঠার আগে গাড়ির দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। গতকাল সেতু বন্ধ হওয়ার পর ফেরি সার্ভিস চালুর সাথে সাথে উভয় পাড়ের যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। সকালে বৃষ্টির কারণে উভয় পাড়ের অ্যাপ্রোচ রোড কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায়। কর্মজীবীদের ভোগান্তি মাড়িয়ে কর্মস্থলে ছুটতে দেখা গেছে। জোয়ারের পানিতে অ্যাপ্রোচ রোড তলিয়ে যাওয়ায় সিএনজি টেক্সি, ম্যাঙ্মিা ও মোটরসাইকেল নষ্ট হয়ে পানিতে আটকা পড়ে। অনেককে দেখা গেছে গাড়িগুলো ঠেলে উপরে তুলতে।

ফেরিতে ওঠার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষমাণ চট্টগ্রাম জজ কোর্টের এপিপি সেলিম চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুটি ফেরি চালুর করার কথা, কিন্তু চলছে একটি। ফেরিতে ওঠার সড়কটি প্রথম দিনেই জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। গাড়িগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগামী তিন মাস আমাদের বোয়ালখালীবাসীকে সীমাহীন ভোগান্তিতে কাটাতে হবে।

এনজিওকর্মী শাহেদা বেগম বলেন, আমরা মহিলা মানুষ, এত পানির মধ্যে কীভাবে ফেরিতে উঠব? সড়কটি নির্মাণের সময় তাদের খেয়াল রাখা উচিত ছিল। আজকে প্রথম দিন উভয় পাড়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। দুটি ফেরি চলাচলের কথা থাকলেও একটি কেন চলছে? এ ব্যাপারে ফেরির চালক আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা আজাদীকে বলেন, দুটি ফেরি চালুর কথা। একটির চালক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ওটা চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে এ পথ দিয়ে পারাপারে কাউকে যাতে দুর্ভোগে পড়তে না হয় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, কালুরঘাট সেতুর উপর দিয়ে যাওয়া রেললাইনকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে বুয়েটের পরামর্শে বড় ধরনের সংস্কার করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি টাকা। সেতুটি মেরামতের জন্য জুনে রেলওয়ের সাথে ম্যাঙ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানান, সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখের পর কঙবাজার রুটে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হবে। তিন মাস যান চলাচল বন্ধ থাকলেও ১৫ সেপ্টেম্বরের আগে জরুরি ভিত্তিতে সেতুর উপর দিয়ে যাওয়া ট্রেন লাইনসহ সেতুর ডেকিং, পাটাতন মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গতকাল থেকে সেতুর সংস্কার কাজ পুরোদমে শুরু করার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দেখা যায়, সেতুর উভয় পাশে ব্যারিয়ার দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেতুর শহরের অংশের প্রবেশমুখে রাখা হয়েছে বুলডোজার।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা আজাদীকে বলেন, সেতুটি সংস্কারের পর আধুনিক রূপ পাবে। সেতু সংস্কার ও নবায়নের পাশাপাশি পথচারীদের পারাপারের জন্য নতুনভাবে পৃথক একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। মেরামত চলাকালীন সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। যানবাহন বিকল্প পথে চলাচলের জন্য আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফেরি সার্ভিস চালু করেছে। ফেরি দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। ভারী যানবাহনগুলো শাহ আমানত সেতু দিয়েও যাতায়াত করতে পারবে।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930