ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ মাসেই ঢাকা সফরে আসছেন । তার সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকা-নয়া দিল্লি কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। এর মধ্যে নতুন করে এক রোহিঙ্গা সঙ্কটে মুখোমুখি ভারত ও বাংলাদেশ। এ সঙ্কটে ঠিক বিপরীত অবস্থানে রয়েছে এ দুটি দেশ। গত মাসে ৮০ জনের বেশি রোহিঙ্গা আন্দামান সাগরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সাগরে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ, বাংলাদেশ তাদেরকে ফেরত নিতে রাজি হচ্ছে না। অনলাইন ইন্ডিয়া টুডে’তে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এসব কথা লিখেছেন প্রভাষ কে. দত্ত।
সাংবাদিক প্রভাষ কে. দত্ত আরও লিখেছেন, আন্দামান সাগরে কমপক্ষে ৮০ জন রোহিঙ্গা একটি বোটে ভাসছেন। ওই বোটটি সমুদ্রের মাঝে অচল হয়ে পড়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত মাসে ভারতীয় উপকূল রক্ষীরা এসব রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করে। তাদের খাবার ফুরিয়ে গেছে। পানীয় জল নেই।
গত ১১ই ফেব্রুয়ারি তারা বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু যাত্রার মাঝপথে ভারত মহাসাগরের মাঝে তাদের বোটের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির থেকে যখন তারা বোটে ওঠেন তখন তাদের সংখ্যা ছিল ৯০। এর মধ্যে ৫৬ জন নারী, ২১ জন পুরুষ, ৮ টি বালিকা ও ৫টি বালক ছিল। চারদিন তাদের বোট চলার পর এর ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এর মধ্যে ভারতীয় উপকূল রক্ষীরা তাদের সন্ধান পাওয়ার আগে কমপক্ষে ৮ জন মারা যান। তাদের সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন তারা সবাই ছিলেন ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত। চরম মাত্রায় পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন তারা। প্রভাষ কে. দত্ত আরো লিখেছেন, ভারত তাদেরকে খাবার সরবরাহ দিচ্ছে। চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে তাদেরকে এখন পর্যন্ত তীরে ভেড়ার অনুমতি দেয়নি ভারত। এ নিয়ে জীবিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ এসব রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য নয় বাংলাদেশ। তবে এসব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের দরজা খোলার জন্য যোগাযোগের চ্যানেল খোলা রেখেছে ভারত।
এ নিয়ে যে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব। তিনি বলেছেন, ওই বোটে যেসব মানুষ বেঁচে আছেন তার মধ্যে ৪৭ জনের কাছে পরিচয় পত্র আছে। এগুলো বাংলাদেশে অবস্থিত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকে ইস্যু করা। এসব পরিচয়পত্রে বলা হয়েছে, তারা মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাংলাদেশ সরকারের অনুমতিতে হাইকমিশনে নিবন্ধিত। উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালের রিফিউজি কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় ভারত বা বাংলাদেশ। ওই কনভেনশনে শরণার্থীদের অধিকার সম্পর্কে বলা আছে। এ ছাড়া ওই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী কোনো দেশে শরণার্থী ক্যাম্প থাকলে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের। ফলে বাংলাদেশ বা ভারত কারো দায় নেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে।
দুই দেশের এমন অবস্থানের কারণে এখন সাগরে আটকে পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি যোগ দেয়ার আগেই উভয় দেশ এ সমস্যাটির সমাধান করতে চাইছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ সফরে আসার পরিকল্পনা ছিল মোদির। কিন্তু সরকারিভাবে বলা হয়, করোনা মহামারির কারণে সেই সফর বাতিল হয়। কিন্তু পর্দার আড়ালে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে ক্ষোভের কথাও বলা হয়। ভারতে ওই আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মুসলিম বাদে অন্য সব ধর্মের লোকদের ভারতে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়। তা নিয়ে দেখা দেয় ক্ষোভ।