নিহত হাসানের ছোট ছেলে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনারকলি (২০ নগরীর পতেঙ্গা থানা এলাকায় হাসান আলী হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন )। গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। অপরাধ করতে দেখেও মুখ বুজে থাকায় নিজেকেও অপরাধী বলে স্বীকার করেছেন তিনি। এর আগে, আদালতে ভুক্তভোগী হাসানের বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

জবানবন্দিতে আনারকলি বলেন, আমার বাড়ি মহেশখালী। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় আমার প্রথম বিয়ে হয়। স্বামী মারধর করায় আর সংসার করিনি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শফিকুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীরকে বিয়ে করি। তার বড় ভাইয়ের নাম মোস্তাফিজুর রহমান। আমার শাশুড়ি অসুস্থ বিধায় আমার বাসায় ছিল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর আমার শ্বশুর হাসান আলী আমার বাসায় আসেন। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালবেলা আমাদের ঘরের পাশের একটা খালি ঘরে আমার শ্বশুর, স্বামী ও ভাসুর মোস্তাফিজ যান। ওই ঘরের ভেতর তারা কী করে আমি সব দেখিনি। আমি একবার লুকিয়ে দেখতে গিয়ে জানালা দিয়ে দেখতে পাই আমার স্বামী ও ভাসুর মোস্তাফিজ শ্বশুরকে একটা বস্তায় ভরছেন। পরে বিকালে জানতে পারি, ওরা আমার শ্বশুরকে মেরে ফেলেছেন। আনারকলি জানান, বিকালে আমার স্বামীর নির্দেশে ভাসুর ও আমি লাশটা আমার ঘরে নিয়ে যাই। ওরা দুই ভাই লাশটা টুকরা করে লাগেজ, স্কুলব্যাগ ও বস্তায় ভরেন। আমার স্বামী পলিথিন ও স্কচটেপ আমাকে দেন। আমি সেগুলো ভাসুরকে দিই। রাতে একটা লোককে দিয়ে ওরা বস্তা ফেলে দেন। কোথায় ফেলে দেন তা জানি না। পরদিন ভোরে আমি, আমার স্বামী জাহাঙ্গীর ও ভাসুর মোস্তাফিজ মিলে লাগেজ ১২ নম্বর ঘাটের দিকে ফেলি। স্কুলব্যাগে মাথা ছিল। সেটি আমি ও জাহাঙ্গীর মিলে বিচে নিয়ে যাই। জাহাঙ্গীর মাথাটা পুলিশ বঙের একদম নিচের দিকে পাথরের ভেতর ফেলে দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান জানান, গত শুক্রবার হাসান আলী হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার পুত্রবধূ আনারকলিকে কঙবাজারের মহেশখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন শনিবার আদালতে হাজির করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। প্রথমে তাকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা বাসার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। সাগরের বিভিন্ন স্থানে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ভুক্তভোগীর কাটা মাথার সন্ধান পাওয়া যায়নি। আনারকলি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হাসানের বড় সন্তান মোস্তাফিজুর জানিয়েছিলেন, ২০ সেপ্টেম্বর পারিবারিক ও সাংসারিক নানা বিষয় নিয়ে বাবা, ছোট ভাইসহ আমরা তিনজন চট্টগ্রাম শহরে ছোট ভাইয়ের বাসায় আলোচনা করতে থাকি। একপর্যায়ে বাবার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তখন আমার বাবা আমার গালে থাপ্পড় মারেন। এতে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। সহ্য করতে না পেরে দুই হাত দিয়ে বাবার গলায় চেপে ধরি। এতে বাবা মারা যায়। প্রথমে বস্তায় বাবার লাশ ঢুকিয়ে রুমের এক কোনায় রেখে রুমটি তালা মেরে বাইরে চলে আসি। এরপর ছোট বোনের জামাই ফোরকানকে কল দিয়ে একটি সিএনজি আনার কথা বলি। ওই সিএনজিতে করে মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। এরপর বাবাকে খণ্ডবিখণ্ড করি।

এদিকে মো. হাসানের শরীরের নয়টি খণ্ড পাওয়া গেলেও মাথার খোঁজ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার গভীর রাতে মহেশখালীতে বাবার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হাসানের ছোট ছেলে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনারকলিকে। গ্রেপ্তারের পর তিনি পিবিআই টিমকে জানান, ঘটনার পর পিবিআই যখন হাসানকে শনাক্ত করতে তার স্বজনদের খোঁজ করতে থাকে, তখন জাহাঙ্গীর ও আনারকলি পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। ২২ সেপ্টেম্বর তারা দুজন মাথাটি সমুদ্র সৈকতে পাথরের নিচে ফেলে দেন। এরপর তারা প্রথমে নোয়াখালী চলে যান। সেখান থেকে যান ভোলা। একপর্যায়ে দুজন আলাদা হয়ে যান। আনারকলি চলে আসেন চট্টগ্রামে। বড়উঠানে তার এক ফুপুর বাড়িতে যান। সেদিন রাতে ফুপুকে ঘটনা খুলে বললে ফুপু ভয় পেয়ে যান। পরদিন তাকে বাসা থেকে বের করে দেন। ফোনের একটি দোকান থেকে আনারকলি ফোন দেন তার মাকে। তার মা বলেন, তুই আমার কাছে চলে আয়। আনারকলি চলে যান তার বাবারবাড়ি মহেশখালীতে। সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930