অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও অন্যদের ক্রমবর্ধমান হারে হয়রান, গ্রেপ্তার ও বিচার করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার তার অথবা তার নীতির সমালোচনাকারী মানবাধিকারের পক্ষের ব্যক্তি। ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারত। এরপর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু ও কাশ্মীরে সরকার কঠোর ও বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রয়েছে। মুসলিমদের মানহানীকারী বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এবং বিজেপির যেসব সমর্থক সহিংসতায় যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। করোনা মহামারিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামঞ্জস্যহীন ক্ষতি হয়েছে। এ সময়ে তারা হারিয়েছেন জীবিকা। তাদের খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার পূরণে ছিল ঘাটতি।
ওই প্রতিবেদনে বেশ কিছু রাজ্যে গত মার্চে দেয়া লকডাউন প্রসঙ্গে বলা হয়, লকডাউন ভঙ্গ করার জন্য পুলিশ লোকজনকে পিটিয়েছে। এমনকি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কিনতে যাওয়া মানুষও তা থেকে রেহাই পায়নি। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ ৩২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ আছে। ওই ব্যক্তি দুধ কিনতে তার বাড়ি থেকে বাইরে এসেছিলেন। উত্তর প্রদেশের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ অভিবাসী শ্রমিকদেরকে এক পায়ে লাফিয়ে চলতে বাধ্য করছে। তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে এমন আচরণ অমানবিক বলে বর্ণনা করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। অন্য রাজ্যগুলোতেও অনেক মানুষকে লকডাউন ভঙ্গ করার জন্য খেয়ালখুশি মতো শাস্তি দিয়েছে পুলিশ অথবা প্রকাশ্যে তাদেরকে লজ্জা দিয়েছে। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশের জবাবদিহিতায় ঘাটতি আছে। পুলিশে সংস্কারে ব্যর্থতা রয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের তথ্যমতে, প্রথম ১০ মাসে পুলিশি হেফাজতে মারা গেছেন ৭৭ জন। বিচার বিভাগীয় হেফাজতে মারা গেছেন ১৩৩৮ জন। বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকারে পরিণত হয়েছেন ৬২ জন। জুনে তামিলনাড়–তে পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন একজন পিতা ও তার ছেলে। দেশজুড়ে এ নিয়ে ক্ষোভের ফলে সেপ্টেম্বরে সেন্ট্রাল ব্যুরা অব ইনভেস্টিগেশকে এই মৃত্যুর তদন্ত করতে বলা হয়। ফলে অভিযুক্ত করা হয় ৯ পুলিশ সদস্যকে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও তথ্যপ্রমাণ মুছে দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। জুলাইতে উত্তর প্রদেশে বিকাশ দুবে নামে সন্দেহভাজন একজনকে পুলিশ হত্যা করেছে। বলা হয়েছে, তিনি পুলিশি হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। অজয় বিশতের নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি ১১৯তম বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকারে পরিণত হন। অজয় বিশত নিজের নাম ধারণ করেন যোগি আদিত্যনাথ। তিনি ২০১৭ সালের মার্চে ক্ষমতায় আসেন। সেপ্টেম্বরে উত্তর প্রদেশ পুলিশ ঘোষণা দেয় যে, তারা একটি বিশেষ পুলিশ বাহিনী গঠন করবে। ওয়ারেন্ট ছাড়া তল্লাশি এবং গ্রোপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হবে তাদেরকে। এর মধ্য দিয়ে পুলিশ আরো নিয়ম লঙ্ঘনের সুযোগ পাবে বলে মনে করা হয়।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এতে বলা হয়, লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল তীব্র। মে মাস থেকে এই উত্তেজনা শুরু হয়। জুনে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা সংঘর্ষের রিপোর্ট করেন। এতে কমপক্ষে ২০ সেনা সদস্য মারা যান। সেপ্টেম্বরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলি ছোড়া হয়। ৪০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এটাই দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম গোলা বিনিময়। উভয় দেশই এ ঘটনার জন্য একে অন্য দেশের সেনাদের দায়ী করেন। এই উত্তেজনার মধ্যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন কমপক্ষে ২০০ চীনা মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার। আগস্টে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানায় চীন। কাশ্মীরে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভারত ও পাকিস্তান একে অন্যকে পাল্টাপাল্টি দায়ী করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান সহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলাপ আলোচনার সময় অধিকার সুরক্ষার বিষয় প্রকাশ্যে উত্থাপন করেনি ভারত। নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক প্রতি বছরই বেশি থেকে বেশি টান ধরছে। জুনে নেপালের পার্লামেন্ট সেদেশের একটি রিভাইজড ম্যাপ অনুমোদন করে। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ তিনটি অঞ্চল অঙ্গীভূত করা হয়। ভারতে সীমান্তে বিরোধীপূর্ণ একটি এলাকায় সড়ক নির্মাণ করছিল। এর জবাবে নেপাল ওই উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ২০১৯ সালের নভেম্বরে ভারত দেখায় যে, বিরোধপূর্ণ ওই অঞ্চল তাদের অধীনেই রয়েছে। সেপ্টেম্বরে ভারত ও শ্রীলঙ্কা প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় ভার্চ্যুয়াল সামিট করে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কায় দায়িত্বে আসার পর এ ঘটনা ঘটে।