সৌদি কোম্পানি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) ইন্টারন্যাশনালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য । গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আরএসজিটির সিইও জিন্স ও. ফোলি স্ব স্ব পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সফররত সৌদি আরবের বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল–ফালিহসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সফররত সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল–ফালিহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি ২ দিনের সফরে গত ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন।

সূত্র বলেছে, দেশে এই প্রথম কোন বন্দর বিদেশি অপারেটর দ্বারা পরিচালিত হতে যাচ্ছে। সৌদি কোম্পানি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সূত্র বলেছে, আরএসজিটি একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর। এটি সৌদি আরবের কোম্পানি হলেও মালয়েশিয়ারও এই কোম্পানিতে বড় বিনিয়োগ রয়েছে। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে এই কোম্পানি বন্দর পরিচালনা করে।

আরএসজিটিআই এসওটি (সরবরাহ, পরিচালনা এবং হস্তান্তর) ভিত্তিতে আগামী ২২ বছর পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে। এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য যত ধরণের ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন হবে তার সবই সৌদি কোম্পানি নিয়ে আসবে। চুক্তি শেষে তারা সবকিছু যেভাবে থাকবে ওভাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে চলে যাবে।

সূত্র বলেছে, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল বহুদিন ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্থিতিশীল সরকার তাদের এই ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলে। গত মে মাসে কাতারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালেও সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল–ফালিহ এবং অর্থনীতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ফয়সাল আলিব্রাহিম পিসিটি পরিচালনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন। নানা প্রক্রিয়া এবং চুক্তির শর্তাবলী যাছাই বাছাই শেষে অবশেষে গতকাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেডের পাশ থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত আগেকার বিমানবন্দর সড়কের বাঁকগুলো সোজা করে উদ্ধার করা হয় নদী পাড়ের ৩২ একর জায়গার উপর পিসিটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সম্পন্ন হয় ২০২২ সালে। এই টার্মিনালের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় এক হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয় করে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ই–ইঞ্জিনিয়ারিং এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। বছরে প্রায় ৫ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন টার্মিনালটিতে ১৬ একর ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন পশ্চাদসুবিধা এবং ৫৮৪ মিটার দীর্ঘ জেটি রয়েছে। জেটি এলাকায় পানির গভীরতা সাড়ে ১১মিটার হলেও ১০ থেকে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে। এই টার্মিনালে ১৯০ মিটার লম্বা ও ১০ বা সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের ৩টি কন্টেনার জাহাজ একসাথে এবং ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন জেটিতে ১টি ভোজ্যতেলবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে। তবে ২১০ মিটার বা বেশি ল্যান্থের জাহাজ ২টির বেশি ভিড়ানো যাবে না। টার্মিনালে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটারের আরসিসি পেভমেন্ট (অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড ও সড়ক), ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কন্টেনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস) শেড, ৬ মিটার উঁচু ১ হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ বর্গফুটের পোর্ট অফিস ভবন, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটারের যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে টার্মিনালকে একটি স্বতন্ত্র বন্দরের আদল দেয়া হয়েছে।

টার্মিনালটি পুরোদমে চালু করতে ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি), ৮টি রাবার টায়ারর্ড গ্যান্ট্রি (আরটিজি), ৪টি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার, ৪টি রিচ স্ট্যাকার, ১টি রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরএমজি), ৪টি লো–মাস্ট ফর্ক লিফট, ২টি ফায়ার ট্রাক, ১টি ফায়ার কার, ৩টি নিরাপত্তা পেট্রোল কার, ১টি অ্যাম্বুলেন্স, ৫০ টনের দুইটি টাগ বোট, ২টি পাইলট বোট, ২টি ফার্স্ট স্পিড বোটসহ অন্তত ৮শ’ কোটি টাকার ইকুইপমেন্ট লাগবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল লিমিটেড কিভাবে বা কি কি শর্তে এই টার্মিনাল পরিচালনা করবে, কন্টেনারের মাশুল কিভাবে হবে, বন্দর কর্তৃপক্ষের হিস্যা কি থাকবে ইত্যাদি বিষয় চুক্তিতে রয়েছে। তবে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, সবগুলো শর্তই যাছাই বাছাই করা হয়েছে। যাতে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বার্থ রক্ষা করে একটি বন্ধুপ্রতিম দেশের সাথে ব্যবসা করা যায় তা মাথায় রেখে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম বন্দরে আরো বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলেও সূত্র আভাস দিয়েছে।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930