ইসরাইল দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ গাজায় বর্বর বোমা হামলা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখানে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। এর শিশু ও নারীর সংখ্যাই বেশি। এমনও হয়েছে যে কেউ কেউ পুরো পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক সাংবাদিকের পরিবারের ২২ সদস্য নিহত হয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের নাম মোয়ামেন আল শরাফি। তিনি আল জাজিরা আরবির সংবাদদাতা।

মূলত গাজা উপত্যকার যে বাড়িতে শরাফির পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিলেন বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে তারা প্রাণ হারান। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল জাজিরার একজন কর্মী গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার পরিবারের ২২ সদস্যকে হারিয়েছেন। বুধবার সকালে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আল জাজিরা আরবি সংবাদদাতা মোয়ামেন আল শরাফির পরিবারের ওই সদস্যদের হত্যা করা হয়।

পরিবারের নিহত সদস্যদের মধ্যে আল শরাফির বাবা মাহমুদ এবং মা আমিনা, তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী, বোন এবং তার স্বামীর পাশাপাশি ভাগ্নে ও ভাগ্নিও রয়েছেন। আল শরাফি আল জাজিরাকে বলেছেন, হামলার সময় একটি বিস্ফোরক ব্যারেল বাড়িটিতে আঘাত করে এবং এর ফলে মাটিতে গভীর গর্ত তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘সিভিল ডিফেন্স ক্রুদের কেউ নিহতদের মৃতদেহের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। আমাদের প্রিয়জনকে বিদায় জানানো থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের যথাযথভাবে কবর দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’

হামলার পর তোলা একটি ভিডিওতে আল শরাফির এক আত্মীয়কে বোমা বিস্ফোরিত বাড়ির ধ্বংসাবশেষের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে। ওই আত্মীয় বলেন, ‘মনে হচ্ছে ভোর ৪ বা ৫টার দিকে ইসরায়েলি বাহিনী বাড়িটিতে হামলা চালিয়েছে। সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারিনি। হামলায় বেশ কয়েকজন শিশু নিহত হয়েছে।’

এদিকে বোমা হামলায় নিহত হওয়ার আগে তার মা আমিনা তাকে যে শেষ ভয়েস ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন তা প্রকাশ করেছেন আল শরাফি। ওই ভয়েস নোটে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল, মমিন। তুমি কেমন আছো? আশা করি, তুমি ভালো আছো। তোমার স্ত্রী-সন্তান কেমন আছে? তোমার শারীরিক অবস্থা কি? নিজের যত্ন নিও, বাবা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে এই যুদ্ধ থেকে অক্ষত অবস্থায় রক্ষা করুক। ভালোভাবে নিজের যত্ন নিও, আমি সত্যিই তোমাকে মিস করি, আমি প্রতিদিন তোমার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক।’

এক বিবৃতিতে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক ইসরায়েলি এই হামলার নিন্দা করেছে এবং বলেছে, ‘এই অপরাধের জন্য দায়ী সকলকে জবাবদিহি করার জন্য সমস্ত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আল জাজিরা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আজ (বুধবার) জাবালিয়া ক্যাম্পের ভয়াবহ এই ঘটনাটি সামনে এসেছে। সেখানে মোয়ামেনের পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি হামলায় তার বাবা, মা, তিন ভাইবোন এবং শিশুরা নিহত হয়েছেন।’

আল জাজিরা নেওটওয়ার্ক বলছে, ‘আল জাজিরা অবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করতে এবং শহীদদের পরিবার ও নিরাপরাধ হতাহতদের দুর্ভোগের জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’

এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আল জাজিরার আরেক আরবি সংবাদদাতা ওয়ায়েল দাহদুহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে হারিয়েছিলেন।

এছাড়া গাজায় আল জাজিরার ব্যুরোর সম্প্রচার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু আল-কুমসানও গত ৩১ অক্টোবর জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার বাবা ও দুই বোনসহ পরিবারের ১৯ সদস্যকে হারিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

মাঝে হামাসের সাথে এক সপ্তাহব্যাপী মানবিক বিরতির পর গত শুক্রবার থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল। বিরতির পর শুরু হওয়া এই অভিযানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলকে লক্ষ্য করেই মূলত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার সেনারা।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় কমপক্ষে ১৬ হাজার ২৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই ১২ হাজার।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930