করোনার টিকা শতকরা ৯৪ ভাগ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে চূড়ান্ত পরীক্ষায় মডার্নার তৈরি । নিশ্চিত করে এ কথা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিটি। তারা বলেছে, যাদের ওপর এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল তাদের কারোরই কোনো জটিল রোগ বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। ফলে এখন তারা সারাবিশ্বে নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটরদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জরুরি ভিত্তিতে লাইসেন্স পেতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং বৃটেনের নিয়ন্ত্রকদের কাছে তাদের ডাটা উপস্থাপন করা হয়েছে। মডার্না বলেছে, তারা আশা করছে যুক্তরাষ্ট্রে ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) আগামী ১৭ই ডিসেম্বর তাদের বৈঠকে এই টিকা অনুমোদন দেবে। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান। এতে আরো বলা হয়, এরই মধ্যে মডার্নার কাছ থেকে বৃটেন এই টিকার ৭০ লাখ ডোজ কিনেছে।

মডার্না এর আগে যখন তাদের পরীক্ষার অন্তর্বর্তী ফল প্রকাশ করে এবং বলে যে, তাদের টিকা শতকরা ৯৪.৫ ভাগ কার্যকর, সেদিনই বৃটেন তাদের কাছ থেকে কিনেছে ৫০ লাখ ডোজ। আর বাকি ২০ লাখ কিনেছে গত সপ্তাহে। আগামী মার্চের আগে মডার্নার টিকা বৃটেনে পৌঁছাবে বলে মনে হয় না।

উল্লেখ্য, মডার্না হলো যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচাচুসেটস ভিত্তিক একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি। তারা প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অপারেশন ওয়ার্প স্পিডের একটি মূল অংশ । কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তহবিল থেকে পেয়েছে ২৪৮ কোটি ডলার। যদিও মডার্না সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের টিকা বিক্রির চুক্তি করেছে, তবুও এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, তাদের টিকা সবার আগে পাবে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারের জন্য তারা এই টিকার দুই কোটি ডোজ প্রস্তুত করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে মডার্না। এ বছর আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র কিনেছে ১০ কোটি ডলারের ডোজ। তাদের আরো ৪০ কোটি টিকার ডোজ প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে। তবে মডার্না বলছে, তারা ২০২১ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে ব্যবহারের জন্য ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে ফাইজার/বায়োএনটেকের মতোই  এই টিকা তৈরিতে নোভেল এমআরএনএ  (ম্যাসেঞ্জার আরএনএ) প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। এর সঙ্গে জড়িত ভাইরাসের জেনেটিক কোড। এখানে উল্লেখ্য, ফাইজার এবং মডার্না দুটি প্রতিষ্ঠানই প্রায় একই রকম আশাপ্রদ ফল প্রকাশ করেছে এরই মধ্যে। ফাইজার বলেছে, তাদের চূড়ান্ত ডাটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তাদের টিকা শতকরা ৯৫ ভাগ কার্যকর।

এরই মধ্যে টিকা অনুমোদনের জন্য নিয়ন্ত্রকদের কাছে আবেদন করেছে প্রথমে ফাইজার। পরে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি/এস্ট্রাজেনেকা। আর তৃতীয় আবেদনকারী কোম্পানি হচ্ছে মডার্না। অক্সফোর্ডের তৈরি টিকা শতকরা ৭০ ভাগ সফল বলে দাবি করা হয়েছে। তবে আরো বেশি স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এটা প্রয়োগ করা হলে তাদের টিকাও শতকরা ৯০ ভাগ সফল বলে প্রমাণিত হবে বলে দাবি করা হয়েছে।  তাদের এই দাবি যুক্তরাষ্ট্রে এখন পরীক্ষা করা হবে। তাতে ৫৫ বছরের কম বয়স এমন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। তবে অন্যান্য বিচারে ফাইজারের চেয়ে এগিয়ে আছে অক্সফোর্ড। কারণ, ফাইজারের উৎপাদিত টিকার কার্যকারিতা বেশি হলেও তা সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ৭০ থেকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমন তাপমাত্রায় এই টিকা সংরক্ষণ করা অনেক দেশ বা স্থানের জন্য অসম্ভাব্য ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে মডার্নার টিকা বা অক্সফোর্ডের টিকা রাখতে হবে সাধারণ ফ্রিজ তাপমাত্রায়। আগস্টে মডার্না বলেছিল, তাদের টিকার প্রতিটি ডোজের দাম হতে পারে ৩২ থেকে ৩৭ ডলার। এক্ষেত্রে অক্সফোর্ডের টিকার দাম হতে পারে আরো সহনীয়। অর্থাৎ প্রতি ডোজ টিকার দাম হতে পারে ৪ ডলারেরও কম। এরই মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা ১০ কোটি ডোজ কিনেছে বৃটেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031