এক ডাক্তারপুত্রের মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান এম এ কে আজাদ চৌধুরী রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেসরকারি হাসপাতাল আল মানারে অবহেলায়।
এই চিকিৎসক বলছেন, ‘কোন ডাক্তার ইচ্ছে করে আরেক ডাক্তারের বাচ্চা অবহেলা করবে এটা কেউ কোনদিন ভাবতে পারে না। কেউ কোনদিন এটা করে না।’
গত ২৯ এপ্রিল ঢাকাটাইমসে ডাক্তারের ‘অবহেলায়’ চিকিৎসক পুত্রের মৃত্যু শিরোনামে এক সংবাদ প্রকাশ হয়। আর এর প্রতিক্রিয়ায় নিজের অবস্থান তুলে ধরেন শিশু বিশেষজ্ঞ আজাদ চৌধুরী।
প্রাণ হারানো ফারহাজ নামে ২২ মাস বয়সী শিশুটি লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট মোরশেদ আলম হীরুর সন্তান। গত ২৫ এপ্রিল শিশুটি অসুস্থ হলে মোহাম্মদপুরের আল মানার হাসপাতালে নেয়া হয়।
ভুক্তভোগী পরিবারটি বলছে, গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পরও কয়েক ঘণ্টা শিশুটির চিকিৎসা না করে তাদেরকে বসিয়ে রাখা হয় ‘মিটিং’ এর কথা বলে। এরপর ওই হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়।
এর মধ্যে শিশুটির চিকিৎসক বাবা খবর পেয়ে কুমিল্লায় তার কর্মস্থল থেকে ঢাকায় ছুটে এসে তার সন্তানকে অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু সেখানেও তাকে বাঁচানো যায়নি। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির যে সমস্যা ছিল, তার সেই চিকিৎসা হয়নি।
শিশুটির মামা ঢাকাটাইমসকে জানান, শিশুটির মৃত্যুর পর তার বাবার কাছে ফোন করে আল মানার হাসপাতালের চিকিৎসক আজাদ চৌধুরী ক্ষমা চেয়েছেন।
২৮ এপ্রিল মৃত্যুর পর রাতেই গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর নিয়ে যাওয়া হয় শিশুর মরদেহ। পরে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রায়পুরে পারিবারিক করবস্থানে সমাহিত করা হয় তাকে।
আজাদ চৌধুরী তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ছেলেটি ২৫ এপ্রিল তার কাছে এসেছিল। সেদিন তার কাঁশি ছিল, ঘুমাচ্ছিল। তাকে ঠান্ডা ও কাশির ওষুধ দেন।
পর দিন রাত নয়টার পরে তাদের একটি বৈঠক ছিল। তখন যখন তিনি জানতে পারেন একটা রোগীর অবস্থা খারাপ, তখন তিনি নিচে নেমে আসেন। শিশুটিকে দেখে তাকে জরুরি বিভাগে নেয়া হয়।
এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি জানি না কেন এতো ক্ষোভ এসেছে। তারপর আমি রোগীকে ভর্তি করতে বললাম। পরে আমি আবার ওপরে গেছি।’
‘আমরা পরিস্থিতি দেখলাম বাচ্চা ১০০ পার্সেন্ট ভাল আছে। ইমারজেন্সি ডাক্তার বলল, যে আগে শ্বাসকষ্ট হয়েছে। এক্সরে করতে বললাম; এক্সরে তে নিউমোনিয়া আসছে।’
‘তারপর আমি বললাম, সে যদি কোন খারাপ হয় এনআইসিইউতে নিয়ে যাও। …রাতে ওর অক্সিজেন রিকোয়ারমেন্ট বেড়ে গেছে। ডাক্তার আমাকে কল দিয়েছে। সকাল বেলা আমি যখন যাব তখন সকাল সাতটা বাজে।’
‘তখন ডাক্তার বলল, ওর বাবা এসেছে উনারা পেডিহোপ এ নিয়ে গেছে। এরপরে আমি জানিনা যে বাচ্চাটার কি হয়েছে। পরে আমি শুনলাম বাচ্চাটা মারা গেছে। তখন আমার কাছে খারাপ লাগল।’
আল মানার হাসপাতালের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাচ্চাটা তো আগে এত খারাপ ছিল না।… আমার কাছে মাত্র কয়েক ঘন্টা ছিল। কিন্তু ব্লেম টা (দোষ) দেয়া হচ্ছে যে আমার অবহেলার জন্য এটা হয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে যে এটা সঠিক না।’
বাচ্চাটার চিকিৎসায় কোনো অবহেলা বা ভুল ছিল না বলেও দাবি করেন এই চিকিৎসক। বলেন, ‘তার বাবা ডাক্তার। তিনি এসে দেখতে পারেন। এই জিনিসগুলো মানুষে পড়লে (সংবাদপত্র) ভাববে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করেছি। কোন ডাক্তার এটা করে না।’
‘আমরা চিকিৎসকরা এটা করি না সাধারণত। এটা করার কথা না। কারণ এটাই তো আমাদের জীবিকা। তো এটা আমার কাছে মনে হচ্ছে, একতরফা কথা হয়ে গেছে (স্বজনদের অভিযোগ)।’
বাচ্চাটাকে হাসপাতালে আনতেই স্বজনরা দেরি করেছেন বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। বলেন, ‘যার বাচ্চা, মারা গেলে তো তার তার নানা কথা মনে হবে। …আমাকে বলেছে বাচ্চার অবস্থা খারাপ এক মিনিটও দেরি করিনি। কিন্তু লেখা দেখে (স্বজনদের বক্তব্যে) মনে হচ্ছে আমি অবহেলা করেছি।’
