আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-এর অধীনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মামলায় গ্রেফতার ও কারান্তরীণ প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন । তিনি বলেন, এ ধরনের গ্রেপ্তার বাক স্বাধীনতা ও মুক্তমত প্রকাশের জন্য ভীতিকর ও উদ্বেগের।‌

মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, সরকার বেশ কিছুদিন ধরে সাংবাদিকদের হয়রানি করছে, আর সেল্ফ সেন্সরে বাধ্য করছে যা কখনোই কাম্য হতে পারে না। রোজিনা ইসলাম একজন অত্যন্ত সম্মানিত সাংবাদিক যিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছিলেন। ‌মীনাক্ষী বলেন, রোজিনাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কার্যালয়ে কয়েক ঘন্টা অবৈধভাবে আটকে রেখে নির্যাতন ও পরে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ প্রমাণ করে সরকার দুর্নীতির মূলোৎপাটন ও সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে শুধু সাংবাদিকদেরই শাস্তি দিতে চায়।

সরকারের প্রতি সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, রোজিনা বলেছেন তিনি স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছিলেন। এ সংক্রান্ত তার কয়েকটি সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি বলেন, ভাবতে অবাক লাগে যে, সরকার এই কোভিড মহামারীর সময়ে তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যাগুলো সমাধানের পরিবর্তে সেই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হচ্ছে যিনি জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকাশ করতে চাচ্ছিলেন। ‌মীনাক্ষী গাঙ্গুলী কোভিডের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে জাতিসংঘের গাইডলাইনের কথাও সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, শান্তিপূর্ণ সমালোচককে গ্রেফতার বা হয়রানি করা কোন সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না।‌ এটা সবসময়ই ভুল সিদ্ধান্ত‌ বিশেষ করে যখন তাদের স্বাস্থ্য এমনকি জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। ‌রোজিনা জনজীবনের জন্য ঝুঁকি হতে পারে এমন কিছুই উপস্থাপন করেননি, সাংবাদিক হিসেবে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্যই তাকে গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

সমালোচকদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করে মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার যেন নিজেদের কোন সমালোচনাই সহ্য করতে পারছে না। তিনি বলেন, সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থানে না গিয়ে সরকারের উচিত মানুষের উদ্বেগের বিষয় গুলোকে প্রাধান্য দেয়া।

উল্লেখ্য, পেশাগত দায়িত্ব পালনে সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। সেখানে তাকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হলে তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন আদালত তোলা হলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930