ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া মহামারী কভিড-১৯ এর প্রকোপ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। ইতালি ও স্পেনের পর এই মহাদেশের মধ্যে বৃটেনই এই ভাইরাসটির শিকার বেশি হয়েছে। এখানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বৃটেনে এখন দিনে ছয় থেকে সাতশ’র বেশি প্রাণ যাচ্ছে মরণব্যধি করোনার কবলে পড়ে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের নাগরিক যেমন মারা যাচ্ছেন, তেমনি প্রাণ যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের। সেই তালিকায় আছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরাও।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ২১ জন বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যা আরো বাড়ছে।

এই আতঙ্কের মধ্যে দিন আনে দিন খায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থা অনেকটা মরার ওপর খরার ঘা’র মতো। বিশেষ করে যারা এখানে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। অবৈধ এই অভিবাসীরা বেশিরভাগই ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রেস্তোরায় কাজ করতেনসনগদ অর্থের বিনিময়ে। করোনাকালীন সময়ে সরকার ঘোষিত আর্থিক অনুদান প্যাকেজ তারা পাচ্ছেন না। তাই এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হচ্ছে তাদের।

লন্ডনের ক্রয়ডনে মরোক্কো ক্যাফে নামে এক রেস্তোরায় কাজ করেন বাংলাদেশি এক নাগরিক যিনি এখানে প্রায় ছয় বছর ধরে অবৈধভাবে বাস করছেন। তিনি জানান, অন্যান্য সব রেস্তোরার মতো ক্যাফে মরোক্কো বন্ধ রয়েছে। এই দুর্যোগের সময় তার চলার জন্য রেস্তোরার মালিকের কাছে আর্থিক সহায়তা চাইলেও কোন জবাব পান নি।

যুক্তরাজ্যের গরিব নাগরিকদের জন্য সরকার এমনিতেই বেশ কিছু স্কিম চালু রেখেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কিমটি হলো ইউনিভার্সেল ক্রেডিট। ১৮ বছর বা তার উর্ধ্বে যে কোন বৃটিশ কাজ না করলে বা নিম্ন আয়ের হলে এ সুবিধা পান। অনেক বাংলাদেশি যারা ইতিমধ্যে বৃটেনের নাগরিক হয়েছেন তারা করোনা দুর্যোগের সময় ইউনিভার্সেল ক্রেডিট সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, বৃটেনে লকডাউনের পর দু’সপ্তাহে এ সুবিধা নিতে সরকারি ওয়েবসাইটে প্রায় দশ লাখ লোক আবেদন করেছেন ।
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ৮ লাখেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী রয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। বর্তমান বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন লন্ডনের মেয়র থাকাকালে এই অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিতে তৎকালীন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও তিনি তার এই মতের পক্ষে রয়েছেন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রূপা হকের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেওয়া লিংক থেকে আরও জানা গেছে, বরিস জনসনের কথা ঠিক থাকলে দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থান করা ১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশির বৈধতা মিলতে পারে। কিন্তু মরণব্যধি কোভিড-১৯ এর কারণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এখন সময় সাপেক্ষ বিষয়। এই সময়ে অবৈধ বসবাসকারী এই বাংলাদেশিরা কিভাবে বাঁচবে তা নিয়েই বেশি চিন্তিত। তবে আশার কথা হচ্ছে এমন অবস্থায় বৃটেনে বসবাসকারী গরীবরা যাতে খেয়ে পরে বাঁচতে পারে সেজন্য ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় ফুড ব্যাংক চালু করেছে বিভিন্ন ধাতব্য সংস্থা।
দি ট্রাসেল ট্রাস্ট নামে এক সংগঠন বলছে, বৃটেনে প্রায় ১৪ মিলিয়ন লোক দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে, এর মধ্যে প্রায় ৫ মিলিয়ন শিশু। এদের যেন অনাহারে না থাকতে হয় সেজন্য সংস্থাটি এক হাজার ২০০টি ফুড ব্যাংকের ব্যবস্থা করেছে।

লন্ডনের বাঙালি পাড়া হোয়াইট চ্যাপেলে একটি খাবারের হোটেলে কাজ করতেন বাংলাদেশি জেবিন আহমেদ। কিন্তু গত দুসপ্তাহ ধরে তার হোটেলটি বন্ধ। সে কারণে তার আয়ের পথও বন্ধ। তিনি জানান, অবৈধ বাঙালিরা হোটেলগুলোতে ক্যাশ টাকায় চাকরি করেন। অর্থাৎ মালিকরা তাদের বেতন নগদ অর্থে দিয়ে থাকেন। সরকারি কর কর্তৃপক্ষের কাছে এ কারণে তাদের কোন হিসেব নেই। কিন্তু এখন তারা পড়েছেন বিপদে। আর কয়েকদিন এভাবে চলতে থাকলে ফুডব্যাংকের ধারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলে জানান তিনি।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930