পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় উত্স । উন্নয়ন সহযোগিতা ও বিনিয়োগও বেশি আসে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকেই। তবে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার চীন ও ভারতের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকায় পশ্চিমা দেশগুলোর বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ আগ্রহ কমছে। ব্যবসা ছেড়েও চলে যেতে চাইছে পশ্চিমা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নে বর্তমানে বেশকিছু বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ, ইঞ্জিন-কোচ ও বাস-ট্রাক ক্রয় থেকে শুরু করে বেশির ভাগ বড় প্রকল্পের কাজই গেছে চীন ও ভারতের ঝুলিতে।

ভারতের কাছ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি আগেই পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে আসতে পারে আরো সাড়ে ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি। আর ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে সরকারকে ২ হাজার ৪০০ কোটি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আসে। যদিও এসব ঋণে প্রকল্পে অর্থ ছাড় ও বাস্তবায়নের গতি বেশ ধীর। এসব ঋণ সহযোগিতায় যে প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছে, তার ব্যয়ও তুলনামূলক বেশি। প্রশ্ন রয়েছে প্রকল্পে সরবরাহ করা পণ্যের মান নিয়েও।

চীনের অর্থায়নে উচ্চব্যয়ের প্রকল্পের একটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, যার প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা; যেখানে পাশের দেশ ভারতে এ ধরনের টানেল নির্মাণে ব্যয় হয় প্রতি কিলোমিটারে ৫০০ কোটি টাকার মতো। এমনকি চীনের ইয়েলো নদীতে যে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে, তার ব্যয়ও প্রতি কিলোমিটারে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা।

তার পরও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীন ও ভারতের আগ্রহ অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভারত ও চীনের প্রতি মনোযোগ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।

যদিও চীন ও ভারতকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কে পিছিয়ে পড়ছেন বলে মনে করেন না অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, বরং অর্থনৈতিক। আর অর্থনৈতিক বিষয় বলেই যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমারা আমাদের থেকে পণ্য কিনে লাভবান হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করব। তাই এ বিষয়গুলোকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখা উচিত।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031