অষ্টম শ্রেণি পাশের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় বর্তমানে মোট যানবাহনের অর্ধেকের বেশি চালক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারছে না। বিআরটিএ(বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কার্যালয়ে গিয়ে অনেকেই সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে আবেদন করলেও পরবর্তীতে ধরা পড়ায় ওইসব আবেদন বাতিল হচ্ছে। এতে নতুন আইন কার্যকরের সাথে সাথে বিভিন্ন শ্রেণির যানবাহনে চালক সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিআরটিএ’র গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ২ লাখ ২৭ হাজার ১৮৪টি বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত যানবাহনের নিবন্ধন দিয়েছে। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি চালকের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তাদের মতে, বর্তমানে চট্টগ্রামে লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা আনুমানিক সাড়ে ৫৫ শতাংশ।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী, লাইসেন্স আবেদনের জন্য প্রার্থীকে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে। এর পাশাপাশি প্রার্থীকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নন্যূতম ১৮ বছর ও পেশাদার লাইসেন্সের ২১ বছর হতে হবে। ওই আইনটিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
গত ১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহনের নতুন আইনটি কার্যকর হলেও বর্তমানে তা কিছুদিনের জন্য শিথিল রয়েছে। যানবাহন চালক মালিকদের লাইসেন্স নেয়ার জন্য একটি সময় দেয়া হয়েছে। এতে যানবাহন চালক ও মালিকরা এখন ভিড় করছে চট্টগ্রাম বিআরটিএ কার্যালয়ে। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় হাজার হাজার চালক বিআরটিএ কার্যালয় থেকে ফিরে আসছে বলে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
৩ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত জাল সার্টিফিকেট নিয়ে অন্তত ১শ’টি আবেদন বাতিল করে দেয়া হয়েছে বলে জানান বিআরটিএ কর্মকর্তারা। লাইসেন্স আবেদন নিয়ে সার্টিফিকেট জালিয়াতি একটি চক্রও তৈরি হয়েছে বলে জানান তাঁরা। এব্যাপারে বিআরটিএ চট্টগ্রামের উপ পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আইনের বিষয়ে আইন প্রণেতারাই ভালো বলতে পারবেন।
বিআরটিএ লাইসেন্স শাখার পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু একটি আইন তৈরি হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের আইন অনুযায়ী কাজ করতে হচ্ছে।
নতুন আইনে অষ্টম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেটসহ সব শর্ত পূরণ করেই একজন ব্যক্তি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে বলে জানান বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রো এলাকায় ১৪শ’ বাস চলাচল করছে। এরমধ্যে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। বাকীদের লাইসেন্স নেই। তারা এখন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছেন।
চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ জেলায় ৫০ হাজার ও নগরে ১৩ হাজার সিএনজি ট্যাঙি চলাচল করছে। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই ।
হারুন বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে চালকদের ফিল্ড টেস্টের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান করলে হাজার হাজার চালক বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাবে। চালক সঙ্কটও তৈরি হবে না।
অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, নগর ও জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার সিএনজি ট্যাঙি চালক রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ চালকের লাইসেন্স রয়েছে। ৭০ শতাংশ চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বিআরটিএ’তে আবেদন করছেন। অষ্টম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট না থাকায় তাদের আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফিল্ড টেস্টের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে ওইসব চালকদের লাইসেন্স প্রদানের দাবি জানান তিনি।
এদিকে ইতিমধ্যে চালক সঙ্কটের কথা জানিয়েছে আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীন মোহাম্মদ দাবি করেন, চট্টগ্রামে ৬ হাজারের মতো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রয়েছে। এরমধ্যে চালক সঙ্কটের কারণে তিন হাজারের বেশি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না ।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ছোট-বড় যানবাহন মিলে প্রায় ১ কোটি গাড়ির লাইসেন্স রয়েছে। এরমধ্যে চালকের লাইসেন্স রয়েছে ৪০ লাখ। ১০ লাখ চালক পেশায় নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা যাচাই করে তাৎক্ষণিক লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করলে চালক সঙ্কট কেটে যাবে।
বিআরটিএ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, এমন ড্রাইভার আছে যারা ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে গাড়ি চালিয়ে আসছে। তবে তারা অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন নয়। আর্থিক অনটনে তারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পারেনি। এদের জন্য শর্ত শিথিল করে বিকল্প পন্থায় অবিলম্বে লাইসেন্স প্রদান করা উচিত।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031