আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা কারাগারে আদালত বসেছে বলে জানিয়েছেন । এই সিদ্ধান্তকে যারা সংবিধানবিরোধী বলছেন, তারাই সংবিধানবিরোধী কথা বলছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে চলা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত বসানোর দিন বিকালে ধানমন্ডিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে আয়োজিত যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কাদের।

একই দিন পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বসা আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি হয়। আগের রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে এই আদালত বসার বিষয়টি চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া খালেদা জিয়া এই কারাগারেই বন্দী। আর তিনি সেখানে যাওয়ার পর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আর আদালতে হাজির হননি।

এই মামলায় সব শেষ শুনানি হয়েছে গত ১ ফেব্রুয়ারি। পরের শুনানি হওয়ার কথা ছিল ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেদিন এবং এরপর বহুবার তারিখ পড়লেও খালেদা জিয়াকে আদালতে নেয়া যায়নি তার অসুস্থতার জন্য। আর এ কারণে বিচার শেষ করতে কারাগারেই আদালত বসানোর আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

কারাগারে আদালত বসানো খালেদা জিয়ার জন্যই সুবিধাজনক হয়েছে বলে মনে করেন কাদের। বলেন, ‘বয়স বিবেচনায় তার পক্ষে কোর্টে মুভ করা সব সময় হয়ত সম্ভব না।জিয়া চ্যারিটেবল যে মামলা, সেই মামলাও তো তিনি হাজিরা দিচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় তাকে হাজিরা দেওয়া সুবিধা করে দেয়ার জন্য এই বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা।’

‘বেগম জিয়া যদি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে না যান কিন্তু অসুস্থতার কারণে  আদালতের মধ্যে যে কোর্ট সেখানে যেতে তো অসুবিধা হবে না।’

বিএনপি কি তাহেরের বিচার ভুলে গেছে?

কারাগারে আদালত বসানোর সমালোচনাকারী বিএনপির কাছে তারা ক্ষমতায় থাকতে কর্নেল তাহেরের বিচারের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রাখেন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘কারাগারে মধ্যে কোর্ট বসানো তো ইন্ট্রোডিউজ (চালু) করেছেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। কর্নেল তাহেরকে জেলে কোর্ট বসিয়ে ফাঁসি দিয়েছিলেন। এটা কি বিএনপি ভুলে গেছে?’

বিএনপি এই সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরোধী বলে দাবি করেছে। তাদের দাবি এটি গোপন বিচার বা ক্যামেরা ট্রায়াল হচ্ছে।

অবশ্য বুধবার যে আদালত বসেছে, সেটি উন্মুক্তই ছিল। আইনজীবীরা যেমন যেতে পেরেছে, তেমনি যেতে পেরেছেন সাংবাদিকরাও।

কীভাবে সংবিধান লংঘন?  

কারাগারে আদালত বসানো যাবে না, সংবিধানের কোথায় এটি লেখা আছে, সেটি  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে তা জানতে চান কাদের।

‘মির্জা ফখরুল সাহেব সুষ্পষ্ট সংবিধানের লংঘন বলেছেন। সংবিধানের সুষ্পষ্ট লংঘন কী কারণে? কোথায় লেখা আছে যে এই ধরনের আদালত বসতে পারবে না?’

‘সব সময় তারা এ রকম করতে থাকেন। কোনো একটা অজুহাতে জনগণকে বিভ্রান্ত করে এবং তারা এই বিষয়টা নিয়েও একটা ছলনার অপকৌশল নিয়েছে। যেটা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’

‘অসুস্থ হলেও তো মামলা চলবেই। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা ১০ বছর বিলম্বিত করেছে। প্রলম্বিত করেছে। এই মামলা অনেক আগেই স্যাটেলড হয়ে যেত, এখানে সরকারের কোন দোষ নেই। সরকার চেয়েছিল মামলাটা যত দ্রুত নিষ্পত্তি হোক কিন্ত বিএনপির বহুরূপী আইনজীবী, এতো বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ  আইনজীবীরা, তারা বেগম জিয়া কেসটা ১০ বছর ধরে চালিয়েছে।’

‘এখন জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্টের যে মামলা, এই মামলাও নানা কৌশলে বিঘ্নিত  করার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বিচারকার্য কারও জন্য তো থেমে থাকবে না।’

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কারাগারে বসা আদালতে না যাওয়া নিয়েও কথা বলেন কাদের। বলেন, ‘কে আদালতে গেল কে গেল না, এটা আদালতের বিষয়।তারা বিচার মানে না, আদালত মানে না, সংবিধান মানে না, এটাই হচ্ছে বিএনপির বৈশিষ্ট্য, এটাই বিএনপির চরিত্র। এটা আদালতের বিষয় আদালতই সেটার জবাব দেবে।’

এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি  মোল্লা মো. আবু কাওসার, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031