চট্টগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ মামলা নিস্পত্তি করেছে। ওই সালে মামলা নিস্পত্তি হয়েছে ২৩ হাজার ৮০৩টি। যা সারা দেশের বিচারিক হাকিম আদালতের মধ্যে মামলা নিস্পত্তির সংখ্যায় সর্বোচ্চ।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেও এ আদালতে মামলা নিস্পত্তি হয়েছে প্রায় চার হাজার। ফলে এ আদালতে বিচারাধীন মামলা নেমে এসেছে এখন ১৫ হাজারে। চট্টগ্রাম জেলার ১৬ থানার ফৌজদারি অপরাধের মামলার বিচারকাজ চলে এ আদালতে।

আদালত সংশ্লিষ্ট ও আইনজীবীরা জানান, সাক্ষী হাজির না হওয়ায় ২০১৬ সালের গুরুতে এ আদালতে ৩৮ হাজার ৮০৩টি মামলা জমে যায়। যার সমাধানে চট্টগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান নিজেই থানায় গিয়ে সাক্ষীর সমন পর্যবেক্ষণ এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ধার্য দিনে সাক্ষীদের হাজিরা, গ্রেপ্তারি ও ক্রোকি পরোয়ানা তামিলের নির্দেশ দেন। একই তদন্তকর্মকর্তা ও চিকিৎসক সাক্ষীর একাধিক আদালতে সাক্ষ্য থাকলে তা একই তারিখে রেখে সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা করেন।

এছাড়া আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগে প্রত্যেক আদালতে আসা সাক্ষীদের পরিসংখ্যান নেন। কোনো আদালতে সাক্ষীর সংখ্যা বেশি হলে, যে আদালতে সাক্ষী কম এসেছে, ওই আদালতের বিচারক সাক্ষ্য নেন। এ কারণে সাক্ষ্য দিতে এসে সাক্ষীকে ফেরত যেতে হচ্ছে না। ২০১৬ সালে ২৫ হাজার ৬৮১ জনের এ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রতন কুমার রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগের ফলে সারা দেশে মামলাজট থাকলেও চট্টগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জট কমেছে। গত বছর এ আদালতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা নিস্পত্তিহয়েছে। নিস্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ২৭ বছর আগের, আবার এক বছর আগে করা মামলাও রয়েছে। মামলা দ্রুত নিস্পত্তি হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগও কমেছে।

নিষ্পত্তি হওয়া কয়েকটি মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর লোহাগাড়া উপজেলা সদরে ৩৫টি ইয়াবা বড়িসহ আলম নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় লোহাগাড়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হলে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তবে জামিনে গিয়ে পলাতক হন আসামি আলম।

এ অবস্থায় পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে চলতি বছরের ৫ মার্চ চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান রায় দেন। রায়ের আদেশে আলমকে তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড, ১০হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড দেন।

মামলা পরিচালনকারী সরকারি কৌঁসুলি জহির উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, বিচার শুরু হওয়ার মাত্র আট মাসের মধ্যে এ মামলার রায় দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে ১৯৯০ সালের ১৯ জুন বোয়ালখালী উপজেলার সমর চৌধুরী বাদী হয়ে তাঁদের বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও মালামাল লুটের অভিযোগে বোয়ালখালী থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ তিন আসামি অরুণ কান্তি চৌধুরী, আশীষ চৌধুরী ও পিপুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটির বিচার ঝুলে ছিল।

আদালত সাক্ষীদের হাজির করার উদ্যোগ নেন। নেওয়া হয় ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য। গত ২৬ জানুয়ারি এ মামলার রায় দেন চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান। রায়ের আদেশে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁদের বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক এ এইচ এম মশিউর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না আসায় মূলত আদালতে মামলা জট সৃষ্টি হয়। মুখ্য বিচারিক হাকিমের নির্দেশে ধার্য দিনে সাক্ষীদের হাজির করতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের নিয়মিত তাগাদা দেওয়া হয়। এমনকি স্বাক্ষ্য দিতে এসে কোন স্বাক্ষী ফেরত না যাওয়ায় দ্রুত মামলা নিস্পত্তি হয়েছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031