আনন্দকে রেখে এসেছে দূরে। ঈদ বিষাদের হয়? হয়। করোনাকালের ঈদ বিষাদই বয়ে এনেছে। এমন ঈদ হবে কল্পনাতেও ছিল না কারো। যে আনন্দ মানুষকে একঘেঁয়ে জীবন থেকে বাইরে টেনে আনে, শামিল করে উৎসবে, সে আনন্দ আজ নির্বাসিত। বলা হচ্ছে, ঘরে থাকতে। নিরাপদে থাকতে। ঘরে থাকাই যে এখন নিরাপদ!

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি সুদূর চীনে। দেশটির হুবেই প্রদেশের উহানের রোগটি ঠিকই পাড়ি দিয়েছে কয়েক সমুদ্র দূরত্ব। করোনা দেখতে কেমন? কী তার অবয়ব, কেউ কি জানে? দেখেছে কখনো?

করোনা কি দেখতে কালো ডানার শকুনের মতো? নাকি মস্ত এক হাতি? শকুনই হবে হয়তো। ডানায় ভর করে এসেছে সদূর সমদ্দুর পথ পাড়ি দিয়ে। তার ডানার কালো ছায়ায় শোক ছড়িয়েছে বিশ্বময়।

পরাশক্তির দেশগুলো আজ নির্জীব, নিস্তব্ধ। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মীমাংসার জন্য। এত ক্ষমতা! আনবিক, পারমানবিক অস্ত্র, ইউরেনিয়ামের গুঁড়ো, সবকিছু মূল্যহীন হয়ে পড়েছে জীবন বাঁচাতে। বিশ্ববাসী জীবনের দামে কিনে নিয়েছে ব্যর্থতাকে। দিনকে দিন লম্বা হচ্ছে ব্যর্থতা নামের রেলগাড়িটির দৈর্ঘ্য।

বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার পর যে আনন্দ আভা ছড়িয়ে পড়ে দিগ্বিদিক, তা আজ নেই। শোক আর শঙ্কায় ঈদ এসেছে পাড়ায় পাড়ায়। দুয়ার আটকে শোকের মাতম করছে কেউ। এমন শঙ্কা আর শোকের ঈদ কেউ চায়নি।

ঈদের আনুষ্ঠানিক আনন্দের শুরু হয় সকালে দলবেঁধে জামাত আদায়ের পর। রঙিন পোশাকে বর্ণিল হয় ঈদগাহ। দিকে রব ওঠে ঈদ মোবারক! ঈদ পরম ভাতৃত্বের বার্তা নিয়ে আসে জীবনে। নামাজ শেষে একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে অতীত ভুলে যায়। সে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের কথা বলে ঈদ, এবার সে ঈদ আসেনি। করোনাকালে ভালোবাসার ঈদ আজ নির্বাসিত। বারণ আছে হাতে হাত রাখার। বুকে বুক মিলানো দূর অস্ত।

করোনা ভাইরাস আমাদের জীবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, কেড়ে নিয়েছে সামাজিক বন্ধনও। বড় একা করে দিয়েছে সামাজিক মানুষকে। এবারের ঈদের জামাতে ছিল না আনন্দের রেশ। ঈদগাহ ফাঁকা ছিল। নামাজ হয়েছে মসজিদে। দূরে দূরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় শেষে আর দূরত্ব মেনে বাসায় ফিরেছে মানুষ। কাছে থেকেও এ যেন কত অচেনা! অথচ একই পাড়ায়, একই মহল্লায় ছেলে বয়স থেকে বুড়ো বয়সে এসে থেমেছে জীবন।

মসজিদে যেসব জায়গায় স্থান পর্যাপ্ত ছিল না সেখানে মানা যায়নি সামাজিক দূরত্ব। তবে পথে মানুষের ভিড় ছিল কম। কেবল নামাজের জন্য যারা বেরিয়েছিলেন জামাত শেষে তারা ফিরে গেছেন ঘরে। ফিরে গেছেন আপন নিরাপদ আলয়ে।

এবারের ঈদে শিশু-কিশোরদের আনন্দেও ভাটা পড়েছে। প্রতিবার ঈদের ভোর থেকে নতুন জামা-কাপড় পড়ে তারা যেভাবে পথে বেরিয়ে যায়, এবার তেমনটা দেখা যায়নি। বাবা-মায়েরা সন্তানদের বের হতে দেননি নিরাপত্তার কারণে। পথ ফাঁকা। ফাঁকা পথে কোথাও কোথাও হচ্ছে পটকাবাজি। গেল রাতে হয়েছে আতশবাজিও।

ঈদে এবার ঘুরতে যাওয়া বারণ। কোথাও নয়। বিনোদন কেন্দ্রগুলো গত দুমাস ধরে খাঁ খাঁ করছে। আজও তাই। কোথাও লোকসমাগম করা নিষেধ করেছে। মেনে চলতে হবে তা। জীবনের জন্য। সুস্থতার জন্য।

মাহতাব আল ইসলাম। ৪৫ বছর বয়সে এমন ঈদ দেখেনি। আনন্দ দেখেছেন, বিষাদ ছোঁয়নি কখনো। কিন্তু এবার তার কাছে ঈদ আনন্দ নয়, নিয়ে এসেছে বিষাদ। বললেন, ‘কেউ কখনো ভাবতে পেরেছে একটি অদৃশ্য শত্রুর ভয়ে থমকে যাবে পৃথিবী। আমরা এখন এমন একটি শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছি যাকে দেখা যায় না। কেবল তার বিধ্বংসী আচরণ সম্পর্কে জানতে পারছি। শত্রু না দেখে এই যুদ্ধ বড় কঠিন। হয়তো আমাদের পেছনেই এসে দাঁড়িয়ে আছে শত্রু। আমরা দেখছি না। জানি না এই যুদ্ধের শেষ কোথায়।’

এবারের ঈদে আনন্দ হবে ঘরে। পরিবারের সঙ্গে। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার বড় সুযোগ পেয়েছে মানুষ। ইতিবাচক ভাবনা দূর করবে বেদনাবোধ। মনোবিদরা তাই তো বলছেন। এই মুহূর্তে বড় প্রয়োজন ইতিবাচক ভাবনা। পরিবারের সাথে হোক আনন্দ ভাগাভাগি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031