প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘রূপকল্প-২০৩০’ ঘোষণার সমালোচনা করে বলেছেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, সংসদ সদস্য হত্যাসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কাজে যারা পারদর্শী তারা আবার জনগণকে কি আশার বাণী শোনাবে? তাদের রূপকল্প মূলত: আমাদের রূপকল্প-২০২১ এরই প্রতিচ্ছবি। রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন উপযুক্ত কৌশল, যোগ্য নেতৃত্ব, সুসংগঠিত দল- সর্বোপরি দেশবাসীর আস্থা। এর জন্য আগে তাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে যে, অতীতের নেতিবাচক রাজনীতি, অনিয়মতান্ত্রিক তৎপরতায় তারা আর ফিরে যাবে না। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি তাদের রূপকল্প-২০৩০-এ যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে তার অধিকাংশই আমাদের সরকার ইতিমধ্যে পূরণ করেছে এবং আগামী অর্থবছরে আমরা বাকি কাজগুলো শেষ করবো। তিনি বলেন, রূপকল্প-২০২১ বাস্তব রূপান্তরের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের বাংলাদেশকে বিশ্বে অগ্রগামী ও উন্নত জনপদে পরিণত করতে আমরা জাতিকে আমাদের এই মেয়াদের মধ্যেই রূপকল্প-২০৪১ উপহার দেব। শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্পের নামে বিএনপি নেত্রী  ক্ষমতায় গেলে তাঁরা কি কি করবেন তার দীর্ঘ ফর্দ দেয়া হলেও কীভাবে কোন পদ্ধতিতে এটা বাস্তবায়ন করা হবে, কীভাবে অর্থায়ন করা হবে- তা স্পষ্ট নয়। এটি অনেকটা নির্বাচনী ইশতেহারের মতোই হয়ে গেছে। এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের আগে ক্ষমতায় যেতে হবে। শুধু তাই নয়, পার্লামেন্টারি পদ্ধতি ও গণভোট পদ্ধতির পরিবর্তনসহ আরো যেসব মৌল পরিবর্তন তারা আনতে চাচ্ছেন, তার জন্য তো সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাগবে। তিনি বলেন, বিগত সময়ে বিএনপি তাদের শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতি, জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, এরপর ক্ষমতার বাইরে থেকে জ্বালাও-পোড়াওসহ অনিয়মতান্ত্রিক তৎপরতা দিয়ে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছেন তা কাটিয়ে উঠে এতটা জনআস্থা অর্জন তাদের জন্য যে কঠিন চ্যালেঞ্জ তা বলাই বাহুল্য। সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সরকার যেহেতু একটি রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে, সে কারণে আমাদের দৃষ্টি কেবল একটি বছরে সীমাবদ্ধ নয়। আওয়ামী লীগ ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে ২০৪১-তে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথমসারির উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত করার রূপরেখা অঙ্কিত হয়েছে। সরকারি দলের একেএম শাহজাহান কামালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনি মোশতাক ও তার দোসর জিয়াউর রহমান ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ড চালায়। বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। জিয়া নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা দেয়। আমি ও রেহানা দেশে ফিরতে চাইলে আমাদের বাধা দেয়া হয়। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদেশের মাটিতেই পড়ে থাকতে হয়। খুনি জিয়া আমাকে ও আমার বোন শেখ রেহানাকে দেশে আসতে দেয়নি। ওই সময় সমগ্র বাংলাদেশকেই কয়েদ খানায় পরিণত করা হয়। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে আসি। জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে সফল হতে পারে নাই। কারণ, বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীবাহিনী সকল বাধা উপেক্ষা করে আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এসে আমি যখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে প্রবেশ করতে যাই, আমাকে ওই বাড়িতে যেতে দেয়া হয়নি। পিতা-মাতা, ভাইদের জন্য একটু দোয়া করার সুযোগও দেয়া হয় নাই। পুলিশ পাহারা ও গেটে তালা দিয়ে আমার পথ রুদ্ধ করা হয়। আমি রাস্তার ওপরই বসে পড়ি এবং আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিলাদ ও দোয়া পড়ি। তিনি বলেন, ১৫ই আগস্ট শুধু যে ঘাতকরা হত্যাকাণ্ড করেছে তাই না, তারা বাড়িতে লুটপাটও করেছে। ১৯৮১ সালের ১২ই জুন পর্যন্ত ঐ বাড়িতে আওয়ামী লীগের কোনো মানুষকে ঢুকতে দেয়া হয় নাই। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিকেরও অবাধে চলাচলের অধিকার থাকে। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে  দেশে আসার পর আমাকে ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১২ই জুন হঠাৎ করে এক ঘণ্টার নোটিশে বাড়িটি আমাকে তাড়াহুড়া করে হস্তান্তর করা হয়। খুনি, ষড়যন্ত্রকারীরা জনমানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আর আমি ও আমার বোন শেখ রেহানা এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আসন্ন ঈদুল-ফিতরে মহাসড়কে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে যাতায়াত নিরাপদ করার লক্ষ্যে ২৯ দফা নির্দেশনা সংবলিত পত্র জারি করা হয়েছে।
রামপাল নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, একটি মহল ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও মনগড়া বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সুন্দরবন ধ্বংস হবে বলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তথ্য প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে বেগবান করে এক সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ৬টি দিক বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তা হলো- প্রকল্পের জন্য সুবিধানজক ও প্রয়োজনীয় জমির প্রাপ্যতা, নদীর নাব্যতা, কয়লা পরিবহনের সুবিধাদি, প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির উৎস /যোগান, বিদ্যুৎ সঞ্চালন সুবিধা, ঘন জনবসতি পরিহার এবং অভয়ারণ্য থেকে নিরাপদ দূরত্ব অবস্থান ইত্যাদি। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৩টি সাইটের মধ্যে রামপাল পরিবেশগত এবং অন্যান্য সার্বিক দিক দিয়ে সবচেয়ে সুবিধাজনক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য রামপালকে বেছে নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রামপালে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে তা হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৯০২ ফুট উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করা হবে, যার দ্বারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পরিশোধিত বায়ু নির্গত হবে। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকাসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, ইনভাইরনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রস্তাবিত মিটিগেশন মেজার্স যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া সুন্দরবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্ট্যাটেজিক ইনভাইরনমেন্টাল এসেসমেন্ট (এসইএ) পরিচালনার বিষয়ে সরকার ইতিমধ্যেই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031