বাংলাদেশের প্রধান খেলা এখন ক্রিকেটই । অন্য খেলা ক্রিকেটের চাদরে যেমন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, তেমনি কমে যাচ্ছে সেসব খেলার ক্ষেত্র। অথচ একটা সময় ছিল যখন সাঁতার, কাবাডি, ভলিবল, ফুটবল এদেশে জনপ্রিয় ছিল। ক্রিকেটের এই যুগে দেশে বেশ কয়েকজন সংগঠক আছেন, যারা অন্যান্য খেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই দলের একজন আশিকুর রহমান মিকু। নড়াইলসহ সারা বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত এক ক্রীড়া সংগঠক। বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের এই মহাসচিব জীবনের প্রায় ৪৫টা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন ক্রীড়া জগতের বাসিন্দা হয়ে। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিবও তিনি। সকাল থেকে রাত অবধি ব্যস্ত থাকেন ক্রীড়া সংক্রান্ত নানা কাজে। যুক্ত আছেন আরো কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে। সম্প্রতি তাকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে মিকু বললেন, ‘৪৫ বছর ধরে যে কাজ করে আসছি এই পুরস্কার তার স্বীকৃতি।’
‘একটি ছোটো জেলাকে নিজস্ব পরিচয়ে পরিচিত করেছি। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিটি খেলায় আমার নড়াইল জেলা নজর কাড়ছে। মহিলা হকি শুরু হয়েছে তিন বছর। তার মধ্যে দুই বছর আমার মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন। একবার রানার্সআপ। রাগবিও শুরু হয়েছে তিন বছর। তার মধ্যে দুইবার আমরা চ্যাম্পিয়ন। ভলিবলেও আমরা চ্যাম্পিয়ন।’ বলেন মিকু।
জাতীয় ভলিবল দলে অধিকাংশ সময় নড়াইল থেকে চার/পাঁচজন খেলোয়াড় থাকে। মহিলা হ্যান্ডবল এবং মহিলা কাবাডিতেও বিভিন্ন সময় জেলটি চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ হয়েছে। জাতীয় কুস্তি মহিলা দলেও নড়াইলের মেয়েরা আছে। অলিম্পিকে অংশ নেয়া সাতজনের মধ্যে শ্যামলী রায়ও নড়াইল থেকে উঠে এসেছেন। ক্রিকেটার মাশরাফিও এই নড়াইলের ছেলে।
‘জাতীয় কোচ ওসমান খানকে একবার নড়াইলে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে মাশরাফিকে তার মনে ধরে। ওখান থেকে ওসমানের হাত ধরে মাশরাফি আজদ স্পোর্টিং ক্লাবে আসেন। আমি তখন ওই ক্লাবের ভলিবল কমিটির চেয়ারম্যান।’ পুরনো দিনের কথা স্মরণ করেন ‘আপ্লুত’ মিকু।
মিকু নিজের জেলার টেবিল টেনিসের উন্নতি নিয়ে রীতিমতো গর্ব করেন, ‘নড়াইলকে এখন টেবিল টেনিসের সূতিকাগার বলা হয়। টেবিল টেনিসের অধিকাংশ ভালো খেলোয়াড় নড়াইলের। সাইক্লিংয়ের দিকে তাকালেও নড়াইলের জয়জয়কার।’
‘সেদিন নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হলো। নড়াইলের টিম রানার্সআপ হয়ে গেছে। বিকেএসপির মতো যদি সুযোগ সুবিধা থাকতো, তাহলে আমার নড়াইল সব ডিসিপ্লিনে বিকেএসপিকে টেক্কা দিত।’ আক্ষেপও ঝরে প্রবীণ এই সংগঠকের কণ্ঠে।
সম্প্রতি দেশের তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিকু বললেন, এই কার্যক্রমের একজন পরিকল্পনাকারী তিনিও, ‘এখন বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এর পেছনে সামান্যতম হলেও আমার অবদান আছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে সাতজনের একটি মনিটরিং সেল করা হয়েছে। আমি এর মধ্যে একজন। জেলায় জেলায় ঘুরে প্রশিক্ষণ তদারকি করছি।’
‘মনে পড়ে সেই সব দিনের কথা, যখন নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করি; তখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব কোন কার্যালয় বা ভবন ছিল না। কার্যক্রম পরিচালিত হতো জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কেরানীর ড্রয়ার থেকে। আর স্টেডিয়াম ছিল নাম সর্বস্ব পরিত্যক্ত এক খণ্ড জমি। আস্তে আস্তে নিজস্ব উদ্যোগে সরকারি সাহায্য ছাড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্যাভিলিয়ন বিল্ডিং (জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়) প্রথমে এক তলা পরবর্তীতে ৩য় তলায় উন্নীত করেছি। নিজস্ব উদ্যোগে অফিস তৈরি করে, এমনকি চেয়ারটি পর্যন্ত নিজে কিনে বসেছি।’ মিকু স্মৃতি আওড়ান আর স্বপ্ন দেখেন, ‘ধীরে ধীরে বয়স বাড়ছে। জানি না কতদিন থাকবো। যেদিন অলিম্পিকে বাংলাদেশ ভালো করবে, সেদিন আমি না থাকলেও আমার স্বপ্ন ভেসে বেড়াবে বাংলার আকাশে-বাতাসে। নিশ্চয়ই আমি অনেক দূরে বসে তা দেখবো।’
