সৈয়দ আলী মরজুতা আযান। বয়স ছয় বছর। রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নার্সারিতে পড়ে। কথায় বেশ পটু। সবকিছু সুন্দর করে বলতে পারে।

কেমন আছো?

-ভাল আছি চাচ্চু।

তুমি কেমন আছো? পাল্টা প্রশ্ন আযানের।

-খুব ভালো।

তোমার নানুর খবর কী?

-নানু ভাল আছে। এবার রোজায় আম-খেজুর পাঠিয়েছে।

নানু জামা দিয়েছে?

-দিয়েছে। গতবারও জামা দিয়েছে।

এতোক্ষণ আযান যে নানুর কথা বলেছে তিনি আর কেউ নন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিমতলী ট্র্যাজেডির ঘটনায় তিন অসহায় কন্যাকে মেয়ের মর্যাদা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ওই তিন কন্যাকে নিজ হাতে বিয়ে দিয়েছেন। ওই ঘটনার সাত বছর পর আজ সেই কন্যারাও মা হয়েছেন। আর নানু হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর এক কন্যা উম্মে ফারওয়া আক্তার রুনার প্রথম ছেলে সৈয়দ আলী মরজুতা আযান। দেড় মাস আগে আরেক পুত্র সন্তানের মা হয়েছেন রুনা।

রুনা বলেন, ‘আমার বড় ছেলে আযানের নাম রেখেছেন মা শেখ হাসিনা। ২০১১ সালে সন্তান হওয়ার পর আমি আর আমার অন্য দুই বোন- রত্না ও আসমাকে নিয়ে গণভবনে যাই। আসমাও তখন এক সন্তানের জননী। তার ছেলের নাম রমাদান। আযান আর রমাদানের নাম রেখে দেন মা শেখ হাসিনা। সেই নামেই ওরা বড় হচ্ছে।’

পুরান ঢাকায় বসবাসকারী রুনা, রত্না আর আসমা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন কন্যা। আশপাশের বাসিন্দারাও তাদের সেই সম্মানের চোখে দেখেন। তাদের সন্তানদেরও স্নেহ দেন প্রধানমন্ত্রীর নাতি-নাতনি হিসেবেই। তবে রুনা, রত্না আর আসমা শেখ হাসিনার মেয়ে হওয়ার পেছনের কাহিনি বড়ই ট্র্যাজেডিতে ভরা, বড় করুণ।

২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে আপন দুই বোন রুনা ও রত্না তাদের মা, ভাইসহ নিকট আত্মীয় সাতজনকে হারান। ৩ জুন সেই কালরাতে নিমতলীর বাসায় বাগদান হওয়ার কথা ছিল রুনার। সেই আয়োজনও সম্পন্ন ছিল। ততক্ষণে বরপক্ষের লোকজনও এসেছিলেন রুনাদের বাসায়। সেখানে বরপক্ষের পরিবারেরও পুড়ে মরে সাতজন।

রত্নার বিয়ে তারিখ পাকা করা হয়েছিল ওই মাসেরই ১৯ তারিখে। আগুন লাগার আগেই দুই বোন রূপসজ্জার জন্য পার্লারে থাকায় বেঁচে যান। আসমার বিয়ের কথাও পাকাপাকি ছিল। যে রাতে আগুন লাগল এর পাঁচদিন পরই তার বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। তবে আগুনে কেড়ে নেয় আসমার মা, খালা, ভাতিজিসহ তিনজনকে। ভাবি আর বাবা গুরুতর দগ্ধ হন। কোনো রকমে আগুন থেকে রক্ষা পান আসমা। এমন পরিস্থিতিতে ওই তিনজনের যখন কেউই ছিল না তখন তিন কন্যার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুধু কি দায়িত্ব? নিজের মেয়ে হিসেবেও স্বীকৃতি দেন তাদের। আগে থেকে ঠিক করা পাত্রদের সঙ্গে তাদের বিয়ে দেন। আগুনের পাঁচদিনের মাথায় ৯ জুন গণভবনে মহা ধুমধামে শেখ হাসিনা তাদের বিয়ে দেন। নিজেই তিন কন্যাকে মায়ের মমতা দিয়ে ভুলিয়ে দেন মা হারানোর বেদনা।

গণভবনের ওই বিয়েতে প্রধানমন্ত্রী পুরো বাঙালিয়ানা পরিবেশেই কন্যাদের তুলে দেন বরের হাতে। তিনজনের স্বামীকেই নিজের মেয়ে জামাই স্বীকৃতি দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিও দেন প্রধানমন্ত্রী।

স্থানীয় তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে তিন কন্যার উকিল বাবারও দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের মধ্যে রুনার উকিল বাবা হন হাজী সেলিম, রত্নার উকিল বাবা হন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ আর আসমার উকিল বাবা হন তৎকালীন সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031