গত চার দিন ধরে বন্ধ নমুনা পরীক্ষার কাজ। কিট সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে করোনার হটস্পটখ্যাত নারায়ণগঞ্জে । স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান হয়নি। বলা হয়েছে অপেক্ষা করতে। পিসিআর ল্যাব বন্ধ থাকায় উপসর্গ দেখা দেয়া মানুষ পরীক্ষা করতে না পেরে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানিয়েছেন, সোমবারের মধ্যে কিট আসার সম্ভাবনা আছে। তবে নিশ্চিত নন। কিট এলে আবার পরীক্ষা শুরু হবে।
চার দিন পরীক্ষা ও রিপোর্ট দেয়া বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি ও আতঙ্কের কথা স্বীকার করেন তিনি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি ও স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানও কিটের সমস্যা সমাধান ও এখানকার হাসপাতালে আইসিইউর ব্যবস্থা করতে নানামুখী চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
করোনার জন্য হাসপাতাল নির্ধারণের এতদিন পার হলেও এখনো আইসিইউর ব্যবস্থা না করায় তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওপর বেজায় চটেছেন শামীম ওসমান।
জানা গেছে, হটস্পট চিহ্নিত হবার পরই নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যার হাসপাতালটি করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। নমুনা পরীক্ষার জন্য বসানো হয় পিসিআর ল্যাব। গত ১০ এপ্রিল প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন এবং ৬ মে চালু হয় পিসিআর ল্যাবটি। কিন্তু ১৮ জুন কিট সংকটের কথা বলে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ল্যাবের কার্যক্রম। শনিবার পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধই রয়েছে।
ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় যারা আগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তারা অপেক্ষা করছেন রিপোর্টের জন্য। আর প্রতিদিন কয়েক শ মানুষ হাসপাতালে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে অপেক্ষা করছেন স্যাম্পল দেয়ার জন্য। কিন্তু কোনটাই সম্ভব হচ্ছে না তাই সবার দুর্ভোগ চরমে। সবার মধ্যে এ কারণে আতঙ্কও বিরাজ করছে।
একজন ভুক্তভোগী নারী বলেন, প্রতিদিন কথা বলতেছি হাসপাতাল থেকে বলছে এখনো রিপোর্ট আসেনি। সব কার্যক্রম বন্ধ। আমরা যাবো কোথায়?
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইমতিয়াজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত চার দিন ধরে পরীক্ষা বন্ধ। আশা করি আজকে বিকাল বা সোমবারের মধ্যে কিট চলে আসবে। তখন আবার এখানে পরীক্ষা শুরু হবে।
নারায়ণগঞ্জে সংগ্রহ করা সব স্যাম্পল আইইডিসিআরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই স্যাম্পলগুলোর রিপোর্ট দেয়া হবে। কারণ সবাই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন।’
এদিকে কিট সংকটের কথা জানিয়ে ৩০০ শয্যার হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সামুসুদ্দোহা সরকার সঞ্চয় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কবে কিট পাব জানি না। তবে আশ্বাস দেয়া হয়েছে রবিবার বা সোমবারের মধ্যে কিট পাওয়ার। সেই অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, ‘করোনা উপসর্গে আক্রান্ত লোকজন পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে আমাদের কাছে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৬০০ এসএমএস পাঠাচ্ছেন। কিন্তু পরীক্ষা তো করা যাচ্ছে না।
এদিকে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ ইউনিট চালু হয়নি এখনো। যে কারণে গুরুতর অসুস্থদের জীবন বাঁচাতে ছুটতে হচ্ছে রাজধানীতে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, কিট এবং আইসিইউ সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি।
আর স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আইসিইউ নিয়ে অর্ধশতাধিকবার কথা বলেছি কিন্তু তিনি বারবার মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন। জুনের শুরুতে আইসিইইউর ব্যবস্থা করার কথা বললেও এখনো কোনো ব্যবস্থা হয়নি। আমি হতাশ এবং ক্লান্ত হয়ে গেছি, তবুও লাভ হচ্ছে না।
