আব্দুল জব্বার আর নেই আজ ৩০শে আগস্ট সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন(ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। দেশীয় সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধা শিল্পী আব্দুল জব্বার আর নেই। তিনি তার বয়স হয়েছিলো ৭৯ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই কিডনীসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সংগীত তথা সংস্কৃতিক অঙ্গনে। শিল্পী আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ই নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গান গাওয়া শুরু করেন ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে। ১৯৬২ সালে সর্বপ্রথম সিনেমার গানে কন্ঠ দেন তিনি। এরপর থেকে নিয়মিতই চলচ্চিত্রে গেয়েছেন। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির নিয়মিত শিল্পী হয়ে উঠেন। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র ‘সংগম’-এর গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৬৮ সালে ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। একই বছর ‘পীচ ঢালা পথ’ ছবিতে রবীন ঘোষের সুরে ‘পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি’ এবং ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’ ছবিতে ‘সুচরিতা যেওনাকো আর কিছুক্ষণ থাকো’ গানে কণ্ঠ দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন আব্দুল জব্বার। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’সহ আব্দুল জব্বারের অনেক গান তখন ছিলো মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরনার উৎস। সে সময় হারমোনিয়াম নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গেয়েছেন অসংখ্য গান। তার গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও নিয়মিত চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ ছবিতে আলম খানের সুরে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি গেয়ে আকাশছোঁয়া সফলতা পান তিনি। আব্দুল জব্বারের প্রথম স্ত্রী শাহীন জব্বার। শাহীন একজন গীতিকার। তার লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আব্দুল জব্বার, সুবীর নন্দী, ফাতেমা-তুজ-জোহরার মত সংগীতশিল্পীরা। তাদের সন্তান মিথুন জব্বারও সংগীত বিষয়ে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন। আব্দুল জব্বারের দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া জব্বার মিতা। তার সঙ্গে জব্বারের পরিচয় হয় একটি মাজারে এবং সেই পরিচয়ের সুবাদেই তাদের সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়। মিতা ২০১৩ সালে পারিবারিক দ্বন্দের জেরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দগ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হলেও চারদিন পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আব্দুল জব্বার জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধু স্বর্নপদক(১৯৭৩), একুশে পদক(১৯৮০), স্বাধীনতা পদক(১৯৯৬), জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ বিদেশে অসংখ্য পদক ও সম্মাননা লাভ করেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031