সাদিয়া আক্তার ঊর্মি (৫) দক্ষিণ ফতেয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী । শ্রেণি রোল ছিল ২৬। ১, ২, ৩ …এভাবে শ্রেণি শিক্ষক কখন ২৬ নম্বর ডাকবেন সে অপেক্ষায় থাকত সে। আর শিক্ষক ২৬ নম্বর বলার সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠত ‘ইয়েস স্যার!’ এভাবেই চলছিল এতদিন। কিন্তু গতকাল সবকিছু উলোট–পালট হয়ে যায়। স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ঊর্মি। মেয়ের মৃত্যুর খবর যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন মা–বাবা। তাদের উপর যেন আকাশটা ভেঙ্গে পড়ল। কারণ গত ৩ বছর আগে মারা গিয়েছিল ঊর্মির আরেক ভাই। ছেলে হারানো সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো দুঃসংবাদ শুনতে হল তাদের। তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর পিতামাতার চোখের মণি হয়ে উঠেছিল সে। তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে অনেক বড় করার স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু গতকাল মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে যায় তাদের সেই স্বপ্ন। বুকের ধনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ঊর্মির মা–বাবা।

নিহত শিশু ঊর্মি চিকনদন্ডী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের হানিফ সওদাগর বাড়ির আমান উল্লাহর কন্যা। তার বাবা পেশায় রং মিস্ত্রি। তার এক ভাই বছরতিনেক আগে মারা যাওয়ার পর তাকে নিয়ে পিতামাতার অনেক স্বপ্ন ছিল। অনেক আশা করে তারা তাদের সন্তানকে ভর্তি করিয়েছিলেন। স্কুল থেকে নতুন শ্রেণির বইও পেয়েছিল। নতুন বই পেয়ে অনেক আনন্দিত হয়েছিল সে। ক্লাসে গেলে হাজিরা ডাকার সময় রোল নম্বর ২৬ কবে আসবে সেদিকে তাকিয়ে থাকত। স্যার ‘রোলকল’ করার সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে সাড়া দিত। কিন্তু এখন হাজিরা খাতায় ২৬ নম্বরে হয়তো তার নাম থাকবে, কিন্তু আর কখনো সাড়া দেবে না ঊর্মি।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে হাটহাজারী থানা পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হাটহাজারী–অক্সিজেন মহাসড়ক ধরে স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরছিল ঊর্মি। এসময় দ্রুতগামী একটি ট্রাকের (চট্টমেট্রো–ট–১১–০০৮৮) চাকা খুলে গিয়ে তাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে সে মারাত্মক ভাবে আহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত ঊর্মির লাশ ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালে রাখা হয়েছে বলে নিহতের প্রতিবেশী মিঠু আজাদীকে নিশ্চিত করেন। পরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকটি আটক করে। ঘটনা তদন্তকারী থানার উপ–পরিদর্শক আবদুল জলিল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে করে বলেন, ট্রাকটি আটক করলেও চালক ও সহাকরী পালিয়ে যায়।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031