এই শহরটিই এখন হয়ে উঠছে করোনা ভাইরাস ঠেকানোর পরীক্ষাক্ষেত্র। উত্তর ইতালির ভো শহরে দেশটির প্রথম করোনা ভাইরাসজনিত মৃত্যু ঘটে। ইতালির পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয়েছে, শহরের ৩৩০০ বাসিন্দার সকলের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। যাদের মধ্যে লক্ষণ দেখা যায়নি, তাদেরও পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, তারা সকল বাসিন্দাকে দু’বার করে পরীক্ষা করেছেন। আর গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, করোনা ভাইরাস বিস্তারে মূলত ভূমিকা রাখেন সেসব রোগী, যাদের মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ৬ই মার্চ ভো শহরে যখন এই গবেষণা শুরু হয়, তখন সেখানে ৯০ জন আক্রান্ত ছিলেন। বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও সেখানে নতুন কেউ এই রোগে আক্রান্ত হননি।

ভো শহরে হওয়া এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছিলেন সংক্রমণ রোগ নিয়ে কাজ করা লন্ডনের প্রখ্যাত ই¤েপরিয়াল কলেজের এক গবেষক।

আন্দ্রিয়া ক্রিসান্তি নামে ওই গবেষক বলেন, আমরা সেখানে মহামারীকে ঠেকিয়ে দিতে পেরেছি। কেননা, আমরা সকল সুপ্ত সংক্রমণও চিহ্নিত করতে পেরেছি ও আক্রান্তদের পৃথক করে রাখতে পেরেছি। এ কারণেই মূলত সাফল্য এসেছে।

গবেষণার কারণে কমপক্ষে ৬ জন ব্যক্তি পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে রোগের কোনো লক্ষণ না থাকলেও, পরীক্ষায় তারা আক্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছেন। গবেষকরা বলেন, যদি এই ব্যক্তিদের শনাক্ত করা না যেত, তাহলে তারা নিজেদের অজ্ঞাতে অন্য বাসিন্দাদের সংক্রমিত করে ফেলতেন। ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সার্জিও রোমাগনানি বলেন, জনসংখ্যায় সংক্রমিত লোকজনের হার লক্ষণহীন হলেও, অনেক বেশি। এই ভাইরাসের বিস্তার ও রোগের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে, লক্ষণহীন আক্রান্ত লোকজনকে আলাদা করতেই হবে।

ইতালিতে ইতিমধ্যেই অনেক বিশেষজ্ঞ ও মেয়র বলছেন দেশজুড়ে গণহারে পরীক্ষা করতে হবে। কারো মধ্যে লক্ষণ না থাকলেও করতে হবে। ভেনিতো অঞ্চলের গভর্নর লুকাজাইয়া বলেন, একটি পরীক্ষা করলে কারো কোনো ক্ষতি হবে না। লুকাজাইয়া তার অঞ্চলে প্রত্যেক বাসিন্দার পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ভো হচ্ছে ইতালির সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। এটিই প্রমাণীত যে পরীক্ষা করলে কাজ হয়। তিনি আরও বলেন, প্রথমে সেখানে মাত্র ২ জনের মধ্যে এই রোগ ধরা পড়ে। এরপর আমরা সবাইকে পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিই। তখন তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন যে, এটা ভুল। কিন্তু আমরা ৩ হাজার পরীক্ষা চালাই। এর মধ্যে ৬৬ জনের রোগ ধরা পড়ে। এদেরকে আমরা ১৪ দিনের জন্য আলাদা করে ফেলি। এরপর পরীক্ষা করে দেখি ৬ জনের মধ্যে এখনও এই রোগ আছে। এভাবেই আমরা এটি নির্মূল করি।

কেউ কেউ বলছেন, গণহারে পরীক্ষা করতে অর্থ যেমন লাগবে, তেমনি এটি সাংগঠনিকভাবেও বেশ কঠিন। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য প্রায় ১৫ ইউরো বা ১৩৬০ টাকা খরচ হয়। ডব্লিউএইচও প্রতিনিধি রানিয়েরে গুয়েরা বলেন, মহাপরিচালক টেড্রস আধানম ঘেব্রেয়েসাস আপাতত সন্দেহভাজন ও লক্ষণযুক্ত মানুষের পরীক্ষা করতে বলছেন, যত বেশি সম্ভব। এই মুহূর্তে গণহারে টেস্ট করানোর পরামর্শ দেয়া হয়নি।

মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমণশীল রোগের অধ্যাপক ম্যাসিমোগ্যালি বলেন, গণহারে দেশজুড়ে লক্ষণহীন ব্যক্তিদেরও পরীক্ষা চালালে তেমন উপকার না-ও হতে পারে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত সংক্রমণ প্রতিনিয়ত দিক পাল্টাচ্ছে। আজকে যে লোকটির মধ্যে ভাইরাস পাওয়া যায়নি, সে কালকেই আবার সংক্রমিত হতে পারে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031