ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, ‘এসব বন্ধ করার প্রশ্নই আসে না।’ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা—বিটিআরসিও এরই মধ্যে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এরপরও গুঞ্জন থামেনি।ইন্টারনেটনির্ভর কমিউনিকেশন অ্যাপস বা যোগাযোগভিত্তিক মেসেজিং ও ভয়েস কলভিত্তিক অ্যাপস চালু বা বন্ধ করা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা হবে কিনা, এ নিয়ে এরই মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করে ২৫ নভেম্বর বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদের কথার পর। বিটিআরসিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ ও ইমোতে দেশে-বিদেশে ফোন করা যায়। সেই সংখ্যা কতটা জানা না গেলেও এটুকু আমরা বুঝতে পারি, এর মাধ্যমে বৈধ পথে আসা আন্তর্জাতিক কলের সংখ্যা কমেছে। এটা তদারকি করার দায়িত্ব আমাদের। তবে আমরা এ ব্যাপারে এখনও কোনও নীতিমালা গ্রহণ করিনি। আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ওটিটি সেবা বিষয়ে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা দেখেছি, অনেক দেশ এগুলো অবৈধ ঘোষণা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্মার্টফোনে এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের বিষয়ে দুই-এক মাসের মধ্যে বিটিআরসি একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চায়।’

এরপর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘ইমো, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ বন্ধ করার কোনও প্রশ্নই আসে না। এমন কোনও সিদ্ধান্তও সরকার নেয়নি। কাজেই হোয়াটস অ্যাপ, ইমো, ভাইবার বন্ধ হবে না, হচ্ছে না এবং হওয়ার প্রশ্নও নেই।’

যদিও পরবর্তী সময়ে বিটিআরসি তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কমিশনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খাঁন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব অ্যাপস বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা আমাদের নেই। তবে সরকার থেকে কোনও নির্দেশনা এলে আমরা তা কার্যকর করার চেষ্টা করব।’

এক প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন খাঁন বলেন, ‘নীতিমালা বা এ ধরনের কিছু করার আগে অবশ্যই আমরা বিভিন্ন দেশের ‘বেস্ট প্র্যাকটিস’টা দেখে নেব। তাহলে জানা যাবে আদৌ নীতিমালার কোনও প্রয়োজন রয়েছে কিনা।’

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একবার আওয়াজ যখন উঠেছে, তখন আজ হোক বা কাল হোক এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আসবেই। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, দেশে মোবাইল ফোনের রাজস্বের দিক থেকে এগিয়ে আছে ভয়েস কল। এটা কমে ইন্টারনেট বা ডাটা নির্ভরতা বাড়লে মোবাইল ফোন অপারেটরদের রাজস্বে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

তাদের ধারণা, নীতিমালা বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ হলে নেট নিউট্রালিটি বা নেট নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।

ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেল, ইন্টারনেটে থাকা যেকোনও তথ্য বা অ্যাপ্লিকেশন কোনও ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়া সবাই ব্যবহার করতে পারে। ইন্টারনেট সেবা কেনার বিনিময়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে বিল দেওয়া এবং ইন্টারনেটের যেকোনও ‘পরিসেবা’ বিনা বাধায় ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার ভোক্তার রয়েছে। এর অর্থ কোনও ব্যক্তি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাটা ক্রয় করার পরে তিনি সেই ডেটা কিভাবে খরচ করবেন, সেটা তার ব্যাপার। এটাই নেট নিরপেক্ষতা বা নেট-নিউট্রালিটি।

নেট নিউট্রালিটির প্রয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে চাকরিভিত্তিক ওয়েবসাইট বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘অ্যাপসের ওপর কোনও ধরনের রেগুলেশন থাকা উচিত নয়। এসব সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা উচিত।’

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম মনে করেন, ‘কোনও নীতিমালা তৈরি করে প্রযুক্তি বন্ধ করা যায় না। প্রযুক্তি তার মতো করেই চলবে। ফলে নীতিমালা করেও প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ কখনোই বন্ধ করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘কমিউনিকেশন অ্যাপস তো কোনও ক্ষতি করছে না। বরং এর মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা উপকৃত হচ্ছে। আমার মনে হয় না মোবাইল ফোন অপারেটররা নীতিমালা তৈরি হোক, এমনটা চাইবেন।’

আমিনুল হাকিম আরও বলেন, ‘কমিউনিকেশন অ্যাপসের কারণে যদি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর ভয়েস কল কমে যায় তাহলে তাদের ‘সার্ভিস মডেল’ পরিবর্তন করতে হবে। এটা করা গেলে সব পক্ষই উপকৃত হবেন।’ তিনি মনে করেন, কয়েকটি অ্যাপের জন্য যদি নীতিমালা তৈরি করা হয় তাহলে দেখা যাবে আরও নতুন নতুন অ্যাপস আসছে। তখন কী হবে? আবারও নতুন করে নীতিমালা তৈরি করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টেলিকম বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কমিউনিকেশন অ্যাপস উন্মুক্ত থাকার ফলে মোবাইল ফোন অপারেটররা ডাটা নির্ভর না হয়ে ভয়েস নির্ভর থাকতে চাইছেন। এতে বোঝা যায়, ভয়েস কলে তাদের মুনাফা অতিমাত্রায়। যদি এ রকমটা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তারা একটি নীতিমালা চাইবেই। এখন আশঙ্কার কথা হলো, তারা কবে নাগাদ এটা নিয়ে জোরেশোরে মাঠে নামে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর উচিত বিজনেস মডেল পরিবর্তন করে ডাটানির্ভর হওয়া। কম খরচে মানুষ বেশি কথা বলতে পারলে বেশি বেশি করে ডাটা কিনবে।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031