জমি কেনাবেচায় প্রকৃত বাজারমূল্য প্রতিফলিত না হওয়ায় রেজিস্ট্রেশনের সময় জমির মূল্যের বড় একটি অংশ গোপন করে বিদেশে পাচার করা হয়। এই কালো টাকা রোধে জমির সর্বনিম্ন নির্ধারিত মূল্য পদ্ধতি তুলে দেওয়া হবে আগামী বাজেটে।

শনিবার সচিবালয়ে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে প্রাথমিক বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ইআরএফের সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলাল ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে প্রধান সড়কের পাশের এক কাঠা জমি কমবেশি পাঁচ কোটি টাকায় বেচাকেনা হয়। সেটি রেজিস্ট্রেশনের সময় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক নির্ধারিত প্রতি কাঠার মূল্য সর্বনিম্ন ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়। এভাবে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কালো টাকার মালিক হচ্ছেন বিক্রেতারা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা পাচার হচ্ছে জানি। টাকা পাচারের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। আমরা একটা ল্যান্ড প্রাইস ফিক্সড করে দিই, কিন্তু একচুয়াল প্রাইস অনেক বেশি হয়। এই টাকা কী করবে, এটা এ দেশে ব্যবহার করতে পারে না, কারণ কালোটাকা। আমরা এখন চিন্তা করছি, কোনো ল্যান্ড প্রাইস রাখব না। দেয়ার শুড বি নো ল্যান্ড প্রাইস। দাম বাজারই নির্ধারণ করবে। এটা টাকা পাচার প্রতিরোধে কাজ করবে।’

দেশে এখন বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫ ও ২০১৬ দুটি বছর পেয়েছি শান্তিপূর্ণ। দুটি বছরে আমাদের শ্রমিকরা প্রমাণ করেছেন তারা দেশে হরতাল ও অন্যান্য ধরনের ব্যাঘাত সহ্য করবে না। এর ফলে একটা কনফিডেন্ট এসেছে, এর রেসপন্স আমরা দেখতে পাব।’

তবে দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতার কথা স্বীকার করে মুহিত আশা প্রকাশ করেন, বিদেশে যে বিনিয়োগটা হচ্ছে তার কিছুটা দেশে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন দেশে বিনিয়োগের সুযোগ প্রচণ্ড। অভ্যন্তরিন বাজার বিস্তৃত হচ্ছে। সুতরাং এখানে বসেই যথেষ্ট পয়সা বানানোর সুযোগ পাবেন। এটা যখন দেখবেন বিনিয়োগকারীরা, তারা  আসবেন।’

দেশের পুঁজিবাজার এখন আর ফাটকাবাজার নয় বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসা পরিচালনাকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসেছে।

মুহিত বলেন, ‘একটা সময় পুঁজিবাজার ফাটকাবাজারই ছিল। কোনো আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ছিল না। এখন অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। এখন আর ফাটকাবাজার নয়; এর ফলাফল আমরা দেখছি। বাজার অনেকটা স্থিতিশীল। এ পরিস্থিতিতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বলতে পারি, তোমরা পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ো। যেসব রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারের অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি।’

এর আগে আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের প্রয়োজনীয় নানা দিক নিয়ে প্রস্তাব তুলে ধরেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার অমিত সম্ভাবনাময় খাত। কিছু সংস্কারের মাধ্যমে সরকার এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে পারে। ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আনা দরকার।

জিয়াউর রহমান বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দেশের বাজারে ভালো ব্যবসা করছে; তাদের মুনাফার বড় অংশই নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষ এসব মুনাফার কোনো ভাগই পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার কথা বলা হলেও কোনো সাড়া মিলছে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে ইউনিলিভার, নেসলে, নোভার্টিস, এসকেঅ্যান্ডএফ, সনোফি, মেটলাইফসহ প্রায় সব বড় বহুজাতিক কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। এমন অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

এ ছাড়া বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমানো, লভ্যাংশ আয়ে করসুবিধা বাড়ানো, রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড করা, কার্যকর বন্ড মার্কেট চালুর প্রস্তাব তুলে ধরে ইআরএফ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031