আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আবদুল করিম, সায়েমা বেগম, রায়হানসহ কয়েকজন চাকরিজীবী ব্যাগ নিয়ে বাংলামোটরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন । কিন্তু তাদের গন্তব্যের বাস আসছে না। উপায় না পেয়ে হেঁটেই অফিসে রওনা হতে দেখা যায় এদের কয়েকজনকে।

রায়হান পল্টনের একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। থাকেন ফার্মগেটে। সেখানেও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছেন বাসের জন্য। না পেয়ে সিধান্ত নেন হেঁটেই অফিস যাবেন। বাংলামোটর আসার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য। কিন্তু সেই বাস আসছে না। ভাবলেন অটোরিকশায় যাবেন। সেটাও মিলছে না। দুই একটা আসলেও বাড়তি ভাড়া হাঁকছেন চালক।

রায়হান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অফিসের বসকে ফোন দিয়েছিলাম আজ অফিসে যেতে পারব না। অফিস রাজিও হয়। কিন্তু অফিসের একটা প্রয়োজনে বস ফোন দিল যেভাবে হোক যেতে হবে। এদিকে পরিবার বের হতে দিচ্ছিল না। বলা তো যায় না। পরিস্থিতি তো খারাপ।’ ‘আধঘন্টা ফার্মগেট দাঁড়িয়েছিলাম। রাস্তায় বাস নাই, মানুষজনও কম। তাই বাংলামোটর পর্যন্ত হেঁটে আসলাম। ভাবলাম হাঁটতে হাঁটতে হয়তো একটা বাস পেয়ে যাব। কিন্তু দেখতেই পাচ্ছেন বাস নাই।’

রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগসহ বেশ কয়েকটি ব্যস্ত সড়কে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের চলাচল খুব একটা নেই। যানবহনও হাতেগোনা কয়েকটি।

চারদিকে পুলিশের টহল আর তল্লাশি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রায় বিরুদ্ধে গেলে বিএনপির আন্দোলনের হুমকি আর সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের অবস্থানে ভয় পেয়েছে নগরবাসী। একান্ত প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে দৃষ্টি। তবে যাদের উপয়ান্ত নেই, তাদের তো বের হতেই হয়েছে।

এদের একজন ইয়াকুব চৌধুরী। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কী হবে বুঝতে পারছি না। মনের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। খুব ভয় লাগছে। যার কারণে আজ নিজের দোকান বন্ধ রেখেছি। রাস্তায় বের হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু উপায় ছিল না। সন্তান এসএসি পরীক্ষা দিচ্ছে।’

বাড়ির বাইরে বের হয়েছেন এমন আরেকজন হলেন জয়নাল। তার সন্তানও যে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার ছেলেটির পরীক্ষা সকালে। টেম্পু বা রিকশায় চড়ে তাকে কেন্দ্রে নিয়ে যাই। একজন অভিভাবক হিসাবে আমার তো উদ্বেগের শেষ নেই; আমার মতো অনেকেই এমন অবস্থায় রয়েছে।’

সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু বাস আসছে না বললেই চলে। আবার যে পরিমাণ যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন, সেটা ছুটির দিনের চেয়ে অনেক বেশি। একই অবস্থা দেখা যায় ব্যস্ত এলাকা টঙ্গীতে। অস্বাভাবিক রকম ফাঁকা সড়কের ধারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা চেয়ার পেতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেবল ঢাকা নয়, ঢাকামুখী বিভিন্ন মহাসড়কেও পরিস্থিতি একই রকম। কড়া হরতালে যে চিত্র থাকে, তেমনি চিত্র সব জায়গায়। বাস নেই, যাত্রীরা হিউম্যান হলারের মতো ছোট বাহনে যাতায়াত করছে। তাও আবার ঝুলে ঝুলে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031