সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠন করতে পারলে চট্টগ্রামকে প্রদেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন । তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাদেশিক ব্যবস্থা করতে চাই। সাতটি প্রদেশ করবো। চট্টলা একটি প্রদেশ হবে। যদি আপনারা না চান, অন্য নাম (চট্টলার পরিবর্তে) হবে। আপনারা আপনাদের সুখ–দুঃখ দেখবেন, উন্নয়ন আপনারা করবেন। ঢাকার দিকে চেয়ে থাকতে হবে না। এটা (প্রদেশ) হতেই হবে। ১৬ কোটি মানুষকে একজন শাসন করবে, এটা কোথাও নেই, হতে পারে না। একজন শাসন করবে দেশ। এটা পৃথিবীতে নেই।’

গতকাল বিকেলে নগরীর লালদীঘি ময়দানে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ এসব কথা বলেন। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জোট নেতা ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান। এরশাদ বিকেল সোয়া ৫টায় বক্তব্য শুরু করেন এবং টানা ২৭ মিনিট বক্তব্য রাখেন। এর আগে এরশাদ সমাবেশস্থলে আসেন সোয়া তিনটায়। দীর্ঘ বক্তব্যে সরকার পরিবর্তন এবং জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্মিলিত জোটের সহযোগিতা চান এরশাদ। তিনি বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার চান। ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন এবং নিজের মেয়াদকালে সম্পাদিত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেরও ফিরিস্তি তুলে ধরেন। সমাবেশে সম্মিলিত জাতীয় জোট নেতৃবৃন্দও এরশাদের নেতৃত্বে ‘পরিবর্তন’ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন এবং এরশাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার ঘোষণা দেন।

সমাবেশে ইসলামী ফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা আড়াইটা থেকেই লালদীঘির মাঠে জড়ো হতে থাকেন। এরশাদ যখন মঞ্চে উঠেন তখন পুরো লালদীঘি মাঠ ছিল লোকে লোকারণ্য।

সরকার পরিবর্তন করবো : সমাবেশে এরশাদ গঠিত জোট ঐক্যবদ্ধ থাকলে আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ারও ঘোষণা দেন। এসময় সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজ মোমের আলো (ইসলামী ফ্রন্টের প্রতীক মোমবাতি) দেখে শক্তি সঞ্চয় করেছি। আমরা যদি একসাথে হই, ঐক্যবদ্ধ এ শক্তিকে কেউ

আটকাতে পারবে না।

আমরা এগিয়ে যাব। সরকার পরিবর্তন করবো। ক্ষমতায় যাব, ইনশাল্লাহ। এসময় এরশাদ বলেন, ‘কথা দিয়ে গেলাম, ক্ষমতায় গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করব। বেশিদিন জীবন নাই আর। মৃত্যুর আগে দু:শাসনের অবসান দেখতে চাই। নির্বাচনের মাধ্যমে, জয়ী হয়ে আমরা আবার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবো। তিনি বলেন, আমরা সংগ্রামে নেমেছি কেন? ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। নিশ্চয়ই পারব আমরা।

নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার : ‘নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চাই’ মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, ‘যে নির্বাচন হয়েছে, কারচুপি হয়েছে। আগেও তো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন হয় না। ঠিক কী না (সমাবেশে আগতদের উদ্দেশ্যে)? আর সীল মারা নির্বাচন হয়। আমরা তো সীল মারতে পারবো না। সীল মারা বন্ধ করার জন্য শক্তি অর্জন করতে হবে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে লোক থাকতে হবে। সীল মারা বন্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের হারাতে পারবে না। সীল মারার নির্বাচন করলেও হারাতে পারবে না। সীল মারতে দিব না আমরা। নো সীল, নো সীল। ওই নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে হবে।

ফ্লাইওভারের সমালোচনা : ‘ফ্লাইওভারের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘একজন রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, অনেক বড় ফ্লাইওভার তৈরি করেছে, সুন্দর? রিকশাওয়ালা বলে, হ্যাঁ সুন্দর। কিন্তু আমার রিকশা তো ওখানে ওঠতে পারে না। ফ্লাইওভার তো বড় মানুষের জন্য। ’ এসময় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, ‘উনি যে ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর কথা দিয়েছিলেন, পারছেন? এখন চালের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এরশাদ বলেন, একটা রিকশাওয়ালা , একজন শ্রমিক দৈনিক তিনশ টাকা কামায় করেন। বউ–বাচ্চা, ছেলে আছে। ৬০ টাকায় চাল কিনে সংসার পরিচালনা সম্ভব? সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা ঢাকায় থাকেন। ঢাকার বাইরের মানুষ কি অবস্থায় আছে জানে না। ঢাকার বাইরের গরিব মানুষের কথা চিন্তা করেন। ঘরে ঘরে চাকরি দিবেন বলেছিলেন, দিয়েছেন? না। এখন সরকারি হিসাব মতে দেশে ৪ কোটি ৮৬ ল বেকার আছে। কাজ নাই।

দুর্নীতির মহাসড়কে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশ : ‘মানুষ পরিবর্তন চায়’ মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, আপনারা সরকার পরিবর্তন চান? এসময় সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা হাত তুলে সম্মতি জানায়। তখন এরশাদ বলেন, কিছুদিন আগে বলেছিল, টাকা দেয়ার লোক নাই। এখন ব্যাংক শূন্য। টাকা গেল কই? গরীব লোক ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে বিচার হয়, যারা ব্যাংক লুট করেছে তাদের হয় না কেন? পানামা প্যাপার্সে যাদের নাম এসেছে তাদের বিচার হয় না কেন? বাংলাদেশ ব্যাংক লুটের কথা একবছর প্রকাশও করেনি। কারা জড়িত নাম প্রকাশ হয় নি কেন? আমরা জানি জানি তারা কে। কিন্তু প্রকাশ করবে না। এভাবে কতদিন? এভাবে তো চলতে পারে না। তাই মানুষ পরিবর্তন চায়।

‘বাংলাদেশ এখন দুর্নীতির মহাসড়কে হাবুডুব খাচ্ছে’ দাবি করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারে প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তারা বলে, এখন উন্নয়নের মহাসড়কে ঢুকেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে কয় ঘন্টা লাগে? ৫ ঘন্টা। ঢাকা থেকে রংপুরে যেতে লাগে ১৫ ঘন্টা। উন্নয়নের মহাসড়কে এত খানাখন্দ কেন? এত খাল–বিল কেন? টাকাগুলো গেল কোথায়? কার পকেটে গেল? উন্নয়নের মহাসড়ক দুর্নীতির মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতির মহাসড়কে হাবুডুবু খাচ্ছি আমরা। এখান থেকে দেশটাকে উদ্ধার করতে হবে। দেশের ষোল কোটি মানুষকে উদ্ধার করতে হবে। আমরাই পারব।’

স্বৈরাচার নিয়ে কথা বললেন : বর্তমান সরকারকে স্বৈরাচার সরকার দাবি করে সাবেক রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘আমাকে বলত স্বৈরাচার। একটা মানুষ মরে নাই, হাতে রক্তও নাই। এখন তো আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ স্বৈরাচারি রাষ্ট্র হয়েছে। এখন কি বলবেন? এখন লজ্জায় মুখ ঢাকবেন না? আচলে মুখ ঢাকবেন না? লজ্জা তো নাই। এখনো বড় বড় বক্তৃতা দেয়। লজ্জা তো নাই। আমরা স্বৈরাচার না, প্রমাণ করছে বিশ্ব, আন্তর্জাতিক সংস্থা। স্বৈরাচার হচ্ছে এখনকার সরকার।’ এসময় এরশাদ বলেন, মানুষ তো আমাদের স্বৈরাচার বলে না। বলেন আপনারা। মানুষ তো বলে, এরশাদের শাসন ভাল ছিল। তিনি বলেন, এখন মাদক সবখানে পাওয়া যাচ্ছে। চায়ের দোকানে পাওয়া যায় ইয়াবা। আমার সময়ে তো ইয়াবা ছিল না। আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।

এরশাদ বলেন, দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কে? এই দুই জোট (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে) সরকার। এসময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন আমরা (জাতীয় পর্টি) কি দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, না।

একক নেতৃত্ব চান না এরশাদ : ‘একক নেতৃত্ব চান না’ মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, এখন সরকার চালায় কে? একজন মানুষ। কাল যদি বলে ওই লোকটা নাই, তাহলে নাই। কেউ খোঁজ পাবে না তার। পুলিশের কাছে যাবেন, পুলিশ জানে না। কয়দিন পর তার মৃতদেহ নদীর পাড়ে পাওয়া যাবে। কখন কে গুম হবে, কখন কে খুন হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আবার একজন জানেন, প্রধানমন্ত্রী জানেন। এসময় তিনি এ ‘অবস্থা চলতে পারে’ কী না সেই প্রশ্ন রাখেন। এরশাদ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ মানুষ। শান্তিতে বিশ্বাস করি। নিরাপত্তা চাই। নিজের ছেলে–মেয়ের. পাড়া–প্রতিবেশির নিরাপত্তা চাই। রসিকতা করে হেসে এরশাদ বলেন, ‘আল্লাহ জানেন, কাল আবার জেলে যাই কি না, কী হয় বলা যাবে না!’

উন্নয়নের ফিরিস্তি : নিজের ৯ বছরের শাসনকালে যে সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল তার ফিরিস্তি দিয়ে এরশাদ বলেন, ‘আমরা ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাকা করেছি। এলজিআরডি করেছি, ৬১ জেলা থেকে ৬৪ জেলা করেছি, ৫৬০ উপজেলা করেছি, ওষুধ নীতি করেছি, যত ভাল কাজ আমরা করেছি। এসময় এরশাদ আওয়ামী লীগ–বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তারা শুধু লুট আর লুট করেছে। উপজেলা বন্ধ করে দিল। উপজেলা তো আমার বা আমার বাবার ছিল না, জনগণের ছিল। তবু বন্ধ করে দেয়া হল কেন? এরশাদ করছে তাই বন্ধ করা হয়েছে। ওষুধ নীতি করেছিলাম, দেখি কত সাহস বাতিল করেন। পারবেন না।

এসময় এরশাদ নিজের শাসনামলে চট্টগ্রামে যে সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছিলেন তা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি যখন রাষ্ট্রপতি ছিলাম, অনেকের জন্মও হয় নি। আমি চট্টগ্রামের জন্য কি করছি? দ্বিতীয় রাজধানী করার ইচ্ছে ছিল আমার। চট্টগ্রামের জামে মসজিদের সংস্কার আমি করছি। চা বোর্ড, শিপিং কর্পোরেশন হেড অফিস এখানে এনেছিলাম। দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু করছি। কাপ্তাইয়ে ৪২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছিলাম। সিইউএফএল, কাফকো আমি করেছিলাম। এসময় এরশাদ বলেন, সিইউএফএলের ঘাঁট থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার হয়, মানুষ মারার অস্ত্র। আমাদের সময় তো উদ্ধার হয় নি। আমরা মানুষ বাঁচাতে চেয়েছি। মারতে চাইনি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে দ্বিতীয় রাজধানী করার চেষ্টা করেছিলাম। চট্টগ্রামের মানুষ আল্লাহকে ভালোবাসে, আল্লাহ ভক্ত। আল্লাহর কাছে দোয়া চাই, যতদিন বেঁচে আছি ইসলামের খেদমত করতে চাই। তখন মানুষের সাথে ছিলাম, ইসলামের সাথে ছিলাম। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন ইসলামের খেদমত করে যাবো, ইনশাআল্লাহ।’

শিক্ষা ব্যবস্থায় পচন ধরেছে : সরকারের সমালোচনা করে বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। জিপিএ ফাইভ পাচ্ছে, আর নিজের নামটাও লিখতে পারে না। ওই জিপিএ পেয়ে আর কি লাভ আছে। এসময় এরশাদ বলেন, আগে পাস করা কঠিন ছিল, এখন ফেল করা কঠিন। সবাই পাস করে। শতভাগ পাস করতে হবে, তা নাহলে শিক্ষামন্ত্রীর চাকরি থাকবে না। এরশাদ বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় পচন ধরেছে। এ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারব না। পরিবর্তন আসতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, ‘তিনি বলেছেন, সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার জন্য। উনি বলেন, আমরা নাকি সবাই ঘুষ খাই! তারপরও ওনি থেকে গেছেন। কোথায় গেছি আমরা, কোন রসাতলে গেছি আমরা। কোন অন্ধকারে চলে যাচ্ছি আমরা। অন্ধকার থেকে আলোতে আনতে হবে। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা উম্মতে মোহাম্মদীকে দেখতে চাই।’

ইসলামে সন্ত্রাসের কোন স্থান নাই উল্লেখ করে তিন বলেন, ইসলামে জিহাদ আছে। জিহাদ ফরজ। জিহাদ মানে অন্যায়ের প্রতিবাদ।

নিরাপত্তা না থাকায় মা–বা ১৪ বছরের মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, তাই এখন বাল্যবিয়ে এক নম্বর সমস্যা।

সুযোগ পেলে নি:স্বার্থভাবে কাজ করবে জাপা : জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার কবলেন, ‘আমাদের সুযোগ দেন, এরশাদকে সুযোগ দেন। ক্ষমতায় গেলে আমরা নি:স্বার্থভাবে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করবো। আমরা হুসেইন মুহামম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ব। যেখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ–খ্রিস্টান সকলের অধিকার থাকবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির নয় বছরের এবং এর পরবর্তী ২৭ বছরের শাসন দেখেন। যদি আমরা উপকার বেশি করে থাকি তাহলে আমাদের আবার সুযোগ দেন। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা বিদেশে বাড়ি বানাচ্ছে। তারা দেশের মানুষ কোন অবস্থায় আছে সেটা দেখছে না। এভাবে ২৭ বছর চলে গেছে। আর চলতে পারে না। তাই এবার প্রয়োজন এরশাদের।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ১৯৮২ সালে পরিবর্তনের জন্য এরশাদ ক্ষমতায় গিয়েছিলেন। পরিবর্তন করেছেন বলেই জাপা এখনো মানুষের মনে আছে। রাষ্ট্রধর্মকে ইসলাম করেছিলেন এরশাদ। উপজেলা পরিষদ করেছিলেন এরশাদ, ৯০ এর পরে তা বাতিল করেছিল। কিন্তু পারেনি। তিনি বলেন, উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এরশাদ।

ব্যারিস্টার আনিস বলেন, ২০০১ সালে সংবিধানের প্রতি সম্মান রেখে আমরা নির্বাচন করেছিলাম। ২০০৬ সালে কারচুপির নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন আমরা বলেছিলাম, ‘নো এরশাদ, নো নির্বাচন’। পরবর্তীতে ওই হ্মোগানের উপর ভিত্তি করেই নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ হলে আগামী নির্বাচন করবো, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে নির্বাচন করবো। এসময় তিনি বলেন, অনেক দল আমাদের সাথে আসবে, কারণ আমাদের কাছে দেশ বড়।

দেশের মানুষ হাসিনা–খালেদাকে চায় না:

জাতীয় পর্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নগরীর কোতোয়ালী আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বাংলাদেশের মানুষ হাসিনা–খালেদার শাসন চায় না। তারা এরশাদের নয় বছরের শাসন চায়। চায় সম্মিলিত জোটের শাসন। গত ২৮ বছর ধরে যে খুন, গুম হচ্ছে সেখান থেকে পরিত্রাণ চায় মানুষ।

তিন বলেন, ব্যাংক লুটপাট, শেয়ার বাজারের লুটপাট, মানুষের সম্পদের লুটপাট থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন এরশাদের নয় বছরের শাসন। যে শাসন ছিল আইনের শাসন। তিনি বলেন, লাঙ্গল–মোমবাতি একসাথে হলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাব আমরা।

এরশাদের নেতৃত্বে পরিবর্তন চায় ইসলামী ফ্রন্ট : বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান বলেন, এদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেবেন এরশাদ। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ এরশাদকে ভালোবাসেন। ইসলামের জন্য এরশাদ অনেক কিছু করেছেন। আল্লামা তৈয়্যব শাহকে যখন এখানে আসতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছিল, তখন কিন্তু এরশাদ দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছিলেন, আসবে। এম এ মান্নান বলেন, এরশাদকে আবারো রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেখতে চাই। দেশের আপামর জনগণ তার সাথে আছেন।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মাওলানা এম এ মতিন বলেন, দেশের বিদ্যমান হিংসা–বিদ্বেষের রাজনীতি থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেন পল্লী বন্ধু এরশাদ। এসময় তিনি হাত তুলে সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের এরশাদকে সমর্থন করার কথা বলেন। তিনি বলেন, আপনাদের যা আছে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন। আপনাদের দায়িত্ব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠানা।

‘অনরা ক্যান আছন : সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বক্তব্যের শুরুতে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘অনারা ক্যান আছন (আপনারা কেমন আছেন)? মন্ত্রিসভা চিটাগাংকে চট্টগ্রাম গইজ্জি। এসময় তিনি সভায় আগতদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বাঁশখালী আইস্‌েস না’। (বাঁশখালী লোকজন এসেছেন?) তখন হাত তুলে বাঁশখালী থেকে আগত জাতীয় পর্টির নেতাকর্মীরা তার নামে হ্মোগান দেন।

মাহমুুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এরশাদের তিন কাল। রাষ্ট্রপতি ছিলেন ৯ বছর। কারাগারে ৭ বছর। এখন জাতীয় রাজনীতিতে এরশাদ ছাড়া উপায় নাই। এসময় তিনি বলেন, উনি যখন কারাগারে ছিলেন তাকে চট্টগ্রামে আনতে পারে নি। চট্টগ্রামে কাফন মিছিল হয়েছিল। কোর্ট গেছে বিমানবন্দরে। এই সেই এরশাদ। এরশাদের চট্টগ্রাম।

জাতীয় পর্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, পরিবর্তনের সুর বেজে উঠেছে। এখন শুধু অপেক্ষা। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হবে এদেশের আর্শীবাদ, তার বিকল্প নাই।

সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও জাতীয় পার্টি চট্টগ্রাম নগর আহবায়ক সোলায়মান আলম শেঠ। বক্তব্য রাখেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ এমপি, গাজী এম এ ওয়াহিদ, মাহজাবীন মোর্শেদ, সমন্বয় কমিটির আহবায়ক ও জোটের কেন্দ্রীয় লিঁয়াজো কমিটির সদস্য স উ ম আবদুস সামাদ, ইসলামী ফ্রন্ট প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী, এম এ ওয়াহিদ ফারুক, জাতীয় পর্টির ভাইস চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, বিএনএ চেয়ারম্যান সেকান্দর আলী মনি, আলহাজ্ব দিদারুল কবির চৌধুরী, জাপা উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাপা দক্ষিণ জেলার সভাপতি সামশুল আলম মাস্টার, মাসুদ হোসেন খান, আলহাজ্ব হারুন রশীদ রেজভী, নুরুচ্ছাপা সরকার, জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আকবর, অধ্যক্ষ মুফতি আহমদ হোসাইন আলকাদেরী, আবু জাফর মোহাম্মদ, মো. শফিউল আলম।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031