বাঙালিদের জন্য এ দৃশ্য অভিনব। বহুদিন হলো রাজনীতি নেই।  কারণ রাজনীতি খেয়ে, পান করে তারা বড় হয়েছেন। গ্রামে-গঞ্জে, চায়ের দোকানে, হাটে-বাজারে কত উজির-নাজির মারতেন তারা। আড্ডায় রাজনীতিই ছিল সবচেয়ে হট টপিক। চায়ের কাপে ঝড় তুলতেন হতদরিদ্র মানুষটিও। সে একটা সময় ছিল।
এখন করোনার কারণে রাজনীতি ঘরবন্দি। কিন্তু বাস্তবে রাজনীতি ছুটিতে গেছে আরও বহু আগে।
তাই বলে বাংলাদেশে টপিকের যে অভাব তা নয়। একের পর এক ইস্যু আসছে। একটা ইস্যু নিয়ে ক’দিন চলে তুমুল মাতামাতি। এখন যার প্রায় পুরোটাই ফেসবুকে। কেউ কেউ একাধিক ফেসবুক আইডির মালিক। কেউ ভয়ে, কেউ নির্ভয়ে তাদের মতামত দেন। বিখ্যাত সাংবাদিক, ছড়াকার, বুদ্ধিজীবীরাও মত দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেক সময় হয়তো তারা চিন্তাও করেন না তার একটি মত কীভাবে অন্যের মনোজগতে আঘাত করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে দু’টি ইস্যু নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনির হেনস্তা এবং ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের হারিয়ে যাওয়া এবং ফিরে আসা ছিল আলোচনার শীর্ষে। যথারীতি এসব ইস্যুতে মানুষ কয়েকভাগে বিভক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে যার মতো মতামত দিয়েছেন। কিন্তু এই লেখকের মনে হয়েছে, আসল ইস্যুতে মানুষের মতামত পাওয়া গেছে কমই।
পরীমনির কথাই ধরা যাক। ঢাকাই সিনেমার এই শীর্ষ নায়িকাকে নিয়ে নানা আলোচনা। তবে এবার আলোচনার শীর্ষে আসেন তিনি একজন আবাসন ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ দিয়ে। তিনিও প্রথম এ অভিযোগ করেন, ফেসবুকের মাধ্যমে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান তিনি। পরে মামলা দায়ের করেন থানায়। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তদের। এ নিয়ে এখনো বাহাস চলছে ফেসবুকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ফলোয়ার এক কোটির কাছাকাছি। কিন্তু এদের সবাইকেই কি তার ভক্ত বলা যায়? এদের অনেকেই প্রায়শই অশ্লীল ভাষায় তাকে নিয়ে মন্তব্য করেন। এবারও তাকে নিয়ে যেসব মতামত পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে- ১. তাকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টায় জড়িত প্রভাবশালীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২. পরীমনি এতো রাতে কেন ক্লাবে গিয়েছেন। তার পোশাক ভালো নয়। ৩. পরীমনিকে নিয়ে মিডিয়া বেশি প্রচারণা চালাচ্ছে।
ধর্মীয় বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে আলোচিত আবু ত্ব-হাকে নিয়েও বিস্তর চর্চা চলেছে। যদিও এটা স্বস্তিদায়ক যে তিনি ও তার সঙ্গীরা পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব মত দেখা যাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. তার বিষয়ে মিডিয়া নীরব ২. তাকে গুম করা হয়েছে। এতে বিদেশি কোনো সংস্থাও জড়িত থাকতে পারে। ৩. তিনি নাটক করেছেন।
দু’টি ঘটনাতেই একটি বড় অংশ মিডিয়াকে দোষারোপ করেছেন। এটা সত্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। কিন্তু সমালোচকদের এটা মনে রাখা প্রয়োজন- মিডিয়ার অবস্থা বহুলাংশে নির্ভর করে কোনো রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির ওপর। তারচেয়ে এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত দু’টি ঘটনার সঙ্গেই মিডিয়ার ভূমিকা মুখ্য নয়। এসব ঘটনায় প্রধান বিষয় হচ্ছে আইনের শাসন। আর এরসঙ্গে মুখ্য সংশ্লিষ্ট হচ্ছে, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের ভূমিকা। আরও খোলাসা করে বললে, দুটি ঘটনারই তদন্তের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও বিচারের দায়িত্ব বিচার বিভাগের।
পবিত্র কোরআনে যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ইনসাফ। ইনসাফ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে সমাজে এমন দুর্ঘটনা কমে আসবে। আর বিচার নিয়েও কাউকে চিন্তা করতে হবে না। আসল ওষুধের দিকেই মনোযোগ দেয়া উচিত সবার।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031