স্কুল ছুটির পর তৃতীয় শ্রেণির দুই ছাত্রী ভেতরে থাকা অবস্থায় ফটকে তালা দেওয়ার পর স্থানীয়দের উদ্যোগে তাদের উদ্ধার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর বৌদ্ধ মন্দির মোড়ের চট্টগ্রাম সরকারি ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুলে এ ঘটনা ঘটে। দুপুর ২টায় বিদ্যালয়টি ছুটির পর শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে গেলে ফটক আটকে দেওয়া হয়েছিল, তখন কেউ টের পায়নি যে ভেতরে আরো দুটি শিশু রয়ে গেছে।
‘একদিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো, নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশিতে হারাবো’ ছুটির ঘণ্টা ছবিতে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া এ গানটিতে শিশুদের দুরন্তপনার কথা আছে। স্কুল ছুটিতে অনেক দূর যাওয়ার প্রত্যয় রয়েছে। আছে খুশিতে আত্মহারা হওয়ার প্রত্যাশা। ছুটির ঘণ্টা চলচ্চিত্রের চোখ ভেজানো সেই দৃশ্য আরেকবার ভেসে উঠলো, তবে পর্দায় নয় বাস্তবে। ওই গানে শিশুদের দূরে এবং খুশিতে হারিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে স্কুলের ভেতরেই আটকা পড়লো দুই শিশু। দুই শিশুকে নিয়ে চট্টগ্রামে ঘটতে চলেছিল আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। কিন্তু এবার পথচারীদের সহায়তায় রক্ষা পেলো তারা। বাঁচা গেল বড় ধরনের বিপদ থেকেও। কারণ আজ শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন। স্কুল থাকে বন্ধ। শিশু দুটি গতকাল উদ্ধার না হলে কী অবস্থা হত, তা চিন্তা করলেই গা শিউরে উঠে দুজনের পরিবারের সদস্যদের।
এদিকে এ ঘটনায় কার গাফেলতি আছে তা খতিয়ে দেখতে থানা শিক্ষা কর্মকর্তা র্শমিষ্ঠা মজুমদারকে নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসরিন সুলতানা। এ বিষয়ে নাসরিন সুলতানা জানান, আগামী রোববার এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিদ্যালয়টির পাশের চটপটির দোকানি মোহাম্মদ জসিম বলেন, বন্ধ স্কুল থেকে অস্বাভাবিক চিৎকার শুনতে পেয়ে তিনি তার ভাতিজা শের খানকে পাঠান কী ঘটেছে দেখতে। শের খান আরও কয়েকজনকে গিয়ে দেয়ালে কান পেতে শিশু দুটির চিৎকার শোনে। তখন তারা দেয়াল টপকে স্কুলের ভেতর ঢুকে। এরপর স্কুল ভবনের কলাপসিবল গেটের ভেতর দুই শিক্ষার্থীকে কাঁদতে দেখে তালা ভেঙে তাদের বের করে আনে। বেরিয়ে আসার পর বিধ্বস্ত দুই শিক্ষার্থীর চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। এ সময় উপস্থিত সকলে আবেগ আপহ্মুত হয়ে পড়েন।
তথ্য অনুযায়ী, শের খান ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত এক সময়। এখন সে ছালেহ জহুর স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তালাবদ্ধ অবস্থায় আটকে পড়া দুই শিক্ষার্থী হচ্ছে, স্মৃতি মণি ও মণি দে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, থানা শিক্ষা কর্মকর্তা শর্মিষ্ঠা মজুমদার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুন নেসাসহ অন্যান্যরা। এ বিষয়ে মোহাম্মদ শের খান জানান, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলাম ওই সময়। খবর পেয়ে বিমান অফিস এলাকা থেকে স্কুলে ছুটে আসেন স্মৃতি মণির মা ফিরোজা বেগম। তিনি বলেন, লোকমুখে খবর পেলাম আমার মেয়ে স্কুল আটকা পড়েছে। সারা শরীর কাঁপছিল।
প্রধান শিক্ষিকা জানান, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণিতে আছে ১৫০ জন। দোতলায় তাদের শ্রেণিকক্ষ। আমাদের শ্রেণিকক্ষগুলো খোলা থাকে। ভবনের ফটকে কলাপসিবল গেটে তালা দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, দুই শিশুর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি অন্য ছাত্র–ছাত্রীরা যখন ছুটি শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল তখন তারা ফুচকা কিনে এনে খাচ্ছিল। আয়া তাদের দেখেনি। তাই ভবনের কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে চলে যান। আগামীতে এ ব্যাপারে আমরা আরও মনোযোগী হব।
এ ব্যাপারে শৈবাল দাশ সুমন জানান, অভিভাবকদের হাতে দুই শিশুকে তুলে দেব আমরা। একজনের মা–বাবা এসেছেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষক, কর্মী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে হবে। এ যাত্রায় একটি বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেল দুই ছাত্রী।
