নানামুখী উদ্যোগ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর জন্য গ্রহণ করা হয়েছে । এ প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিশ্বমানের ইন্টারোগেশন ইউনিট স্থাপন, ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুকরণ, উন্নত গোয়েন্দা যন্ত্রপাতি ক্রয়, মোবাইল ট্র্র্যাকার স্থাপন, মাদক শনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি ক্রয়, নৌ ইউনিট স্থাপন, ডগ স্কোয়াড ইউনিট স্থাপন ও ডিজিটাল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন ল্যাব স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হতে সিপাই পর্যন্ত সবার জন্য ইউনিফর্মের বিধান রেখে পোশাক বিধিমালা চূড়ান্তকরণের কাজ চলমান আছে। এ ছাড়াও অভিযানের সময় মাদক চোরাকারবারিদের ধরতে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আবেদন করেছে সংস্থাটি। শিগগিরই এইটি অনুমোদন পাবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। কর্তৃপক্ষ যে ক্রিমিনাল ডাটা তৈরি করবে তাতে মাদক ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা থাকবে। পুরনো মাদক ব্যবসায়ী এবং নতুন করে যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হবে তারা এ ডাটার আওতায় আসবে। তালিকা ধরে যাতে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা যায়।
এ ছাড়াও মাদক সংক্রান্ত অপরাধ কমানো ও মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে (I DREAM IT) নামে একটি প্রল্পক বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে সংস্থাটি। এর মাধ্যমে অধিদপ্তরের কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আসবে।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে যুগোপযোগী করার জন্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ নেয়া হয়েছে। অধিদপ্তরের শীর্ষ থেকে কর্মচারী পর্যন্ত পোশাকের অনুমোদন পাওয়া গেছে। অস্ত্র পাওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। খুব শিগগিরই অস্ত্র পাওয়া যাবে। মাদক দমন করতে অস্ত্রের বড় প্রয়োজন।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সন্দেহভাজন সদস্যদের ডোপটেস্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দপ্তর। নতুন বছরের শুরু থেকেই এই টেস্ট চালু করবে সংস্থাটি। রিপোর্ট পজেটিভ এলে তাকে চাকরি হারাতে হবে। এর আগের বছর সংস্থাটি একটি টেস্ট চালু করেছিল। সেখানে অধিদপ্তরের একজন সদস্যের পজেটিভ হওয়ায় তার চাকরি চলে গেছে। অধিদপ্তরের স্বচ্ছতা আনার জন্য আবার সংস্থাটি টেস্ট চালু করেছে। এ ছাড়াও মাদকে সর্বোচ্চ সাজার বিধান রেখে আইন প্রণয়নসহ প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ একাধিক সংস্থার কাছে ডগ স্কোয়াড রয়েছে। এ ডগ স্কোয়াড দিয়ে মূলত বিস্ফোরক শনাক্ত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ডগ স্কোয়াড নেয়। মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য সংস্থাটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে যান। যে সব বড় কার্টনে মাদক পাচার করা হয়ে থাকে সেগুলোতে তারা বেশি তল্লাশি করতে পারেন না। এজন্য ডগ স্কোয়ার্ডের আশু প্রয়োজন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অধিদপ্তরের প্রস্তাবে নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি থেকে উন্নত জাতের কুকুর সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও বাহ্মণবাড়িয়ার দেশি কুকুর ব্যবহার করা যায় কি-না তা বলা হয়েছে পরীক্ষা ও নিরীক্ষার জন্য। ডগ স্কোয়াড পাওয়া গেলে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার ছাড়াও মাদক শনাক্ত হবে। এতে বিমানবন্দরে মাদক উদ্ধার কার্যক্রম আরো বড় আকারে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, নৌ পথে মাদকের বড় চালান সারা দেশে পাচার হয়ে থাকে। এতে মাদকের বিস্তার সারা দেশে ঘটছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের নাফ নদ দিয়ে ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে। পাশাপাশি সাগরপথে উপকূল দিয়েও ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। এ রুটে অবৈধভাবে যাতে কোনো মাদকদ্রব্য ঢুকতে না পারে এজন্য কর্তৃপক্ষ নৌ ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। নৌ ইউনিটের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে নৌ পথগুলোতে অভিযান চালাবে। এতে মাদকদ্রব্য পাচার অনেকটা কমে আসবে। সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের কাজকে আরো দ্রুতগামী করার জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ল্যাব স্থাপিত হলে অধিদপ্তরের বৈজ্ঞানিক কাজের মান আরো বাড়বে।
সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোনে তাদের ব্যবসার তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। তাদের শনাক্ত করতে আধুনিক বিশ্বের মতো মোবাইল ট্র্যাকার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। ক্রিমিনাল ডাটায় এবং মাঠ পর্যায়ে কমকর্তাদের তালিকায় যেসব ব্যবসায়ীর নাম থাকবে তাদের আধুনিক মোবাইল ট্র্র্যাকার দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের অবস্থান নির্ধারণ এবং তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031