প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ ১৮ না পেরুনো এক কিশোরের হাত ধরে । অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তার অসাধারণ নেতৃত্বগুণে মুগ্ধ ক্রিকেটবিশ্ব। আক্রমণাত্মক মানসিকতা তার নেই। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথার নেতৃত্বগুণ তাকে করেছে অনন্য। তিনি হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন তারকা আকবর আলী।
২০০১ সালের ৮ই অক্টোবর রংপুর সদরে জন্ম আকবরের। ক্রিকেটের প্রথম পাঠ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। লিস্ট এ ম্যাচে অভিষেক ২০১৯’র ৮ই মার্চ। ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে বিকেএসপির হয়ে সেদিন মাঠে নেমেছিলেন তিনি।
তার আগে অবশ্য বিকেএসপির হয়ে টি-টেয়েন্টিতে অভিষেক। প্রতিপক্ষ ছিলো প্রাইম দোলেশ্বর। ১৩ লিস্ট এ ম্যাচে তার মোট রান ২১৫। সর্বোচ্চ ৫৬।
আকবর আলীর অসাধারণ নেতৃত্বগুণে মুগ্ধ টিম ম্যানেজমেন্ট তার হাতেই তুলে দেয় অধিনায়কের ভার। বিশ্বকাপের শুরুতেই তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য রাখে। আকবরের এ কথার গুরুত্ব দেয়নি কেউই। দেবেই বা কিভাবে? বাংলাদেশ তো কখনো আইসিসির কোন আসরের ফাইনালেই ওঠতে পারেনি। কিন্তু যুব বিশ্বকাপে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে এগোতে থাকা বাংলাদেশ দল যখন পৌঁছে গেলো সেমিফাইনালে তখন সবার মধ্যে আকবরের বিশ্বজয়ের ‘গুরুত্বহীন’ ঘোষণা কি দারুণভাবেই না গুরুত্ব পেতে শুরু করলো।
সেমিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আকবরের অধিনায়কত্বে প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে নাম লেখায় বাংলাদেশ। ফাইনালে একবারও নিজের কৃতিত্বের কথা বলেননি। তাকে সবসময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও টিম ম্যানেজমেন্টকে কৃতিত্ব দিতে দেখা গেছে। বিসিবি এ দলটার জন্য গত দুই বছরে প্রচুর ম্যাচ খেলার সুযোগ, বিদেশ সফর, উন্নত সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে বলে বিসিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা ঝরেছে বাংলাদেশ অধিনায়কের কন্ঠে।
একবছরেরও বেশি সময় ধরে একসঙ্গে খেলছে সদ্য বিশ্বকাপ জয়ী দলটা। দলের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়ার ফসল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্ব আসরের শিরোপা জয়।
বিশ্বকাপ চলাকালীন আকবরের জন্য আসে দুঃসংবাদ। ফাইনালের ১৮ দিন আগে আকবর আলীর জীবনে ঘটেছে ভয়াবহ ঘটনা। গত ২২শে জানুয়ারি দেশ থেকে এলো দুঃসংবাদ। একমাত্র বোন খাদিজা খাতুন চলে গেছেন না ফেরার দেশে। যমজ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান তিনি। স্বজন হারানোর বেদনায় ভেঙ্গে পড়েননি আকবর। শোককে শক্তিতে পরিণত করে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুললেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে দেশকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে মাঠ ছাড়েন তিনি।
মাঠের বাইরেও অসাধারণ বাংলাদেশ অধিনায়ক। ক্রিকেট নিয়ে সবসময় মেতে থাকলেও ক্রিকেটের বাইরের জীবনও যে গুরুত্বপূর্ণ সে কথাটাও বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে মনে করিয়ে দেন তিনি। জয়ের পাশাপাশি পরাজয়টাও সহজভাবে মেনে নিতে শিখেছেন আকবর।
আকবর আলী একাধারে ব্যাটসম্যান-উইকেটরক্ষক-অধিনায়ক। অনেকেই আকবরের সঙ্গে সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনীর মিল খুঁজে পান। ধোনির মতো ঠাণ্ডা মাথায় দল পরিচালনায় দক্ষ আকবর জানিয়েছেন, তিনি কাউকে অনুসরণ করেন না। নিজের মতো খেলাতে বিশ্বাসী তিনি।
উইকেটের পেছনে থেকে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের ওপর তীক্ষ্ণ নজর থাকে আকবরের। দলের সাফল্যে নিজের অধিনায়ত্বের অবদানকে আগ্রাধিকার দিতে নারাজ তিনি। সাফল্যের কৃতিত্ব দলের সবার বলে ফাইনাল শেষে জানিয়ে দেন আকবর।
উইকেটরক্ষকের মতো ‘থ্যাঙ্কলেস’ কাজের পাশাপাশি ব্যাট করেন ছয় নম্বরে। নিজেকে ফিনিশারের ভূমিকায় দেখতে পছন্দ করা রংপুরের এই ক্রিকেটারের হাত ধরে নতুন দিনের সূচনা হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। একদিন হয়তো তার নেতৃত্বে বিশ্বক্রিকেটে পরাশক্তি হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।
