করোনা ইউনিটে ২৮ জন রোগী মারা গেছে একটি নিউজে দেখলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ । তারমধ্যে ৪জন করোনা পজিটিভ ছিল। আর বাকি ২৪ জন সাসপেক্টটেড কেস হিসেবে আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এই ২৪ জন রোগীর মধ্যে কারো কারো মৃত্যুর পর স্যাম্পল নেয়া হয়েছে, কারো কারো স্যাম্পল নেয়া হয়নি।
যাদের স্যাম্পল নেয়া হয়নি তাদেরকে অবশ্যই নরমাল মৃত ব্যক্তির নিয়মে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনেরও যদি সত্যিকার অর্থে কোভিড-১৯ এর জন্য মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে এই মৃতের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হবে। এই মৃতের আত্নীয় স্বজনরা আক্রান্ত হবে, তাদের প্রতিবেশীরা আক্রান্ত হবে। একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির স্যাম্পল কালেকশন না করে অন্যান্য রোগে মৃতদের মত দাফন করলে কত মানুষ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এটা দেশের সবাই অনুধাবন করতে পারে, শুধু পারে না ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধিপতিরা ।
আপনারা সন্দেহভাজন মৃত ব্যক্তিরই পরীক্ষা করাননি, অথচ নিয়মানুযায়ী মৃত ব্যক্তি পজিটিভ হলে সাথে যে এটেনডেন্ট থাকে তাদেরকেও পরীক্ষা করাতে হয়। এমনকি সেই মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা যারা এসেছেন সবার পরীক্ষা করাতে হবে। সেটা না করলে আরো কতশত জন আক্রান্ত হবে সেই ধারণা নিশ্চয় আপনাদের থাকা উচিত।
সন্দেহভাজন হিসেবে ভর্তি করবেন অথচ
টেস্ট এন্ড ট্রেস না করেই ছেড়ে দিবেন, এটা কোন ধরনের অপদার্থতা? কোন ধরণের
অজ্ঞতা? এই ২৪ জন রোগী ৩ দিনে মারা গেছে মানে প্রতিদিন গড়ে ৮ জন রোগী মারা
গেছে। এই ৮ জন কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন মৃত ব্যক্তির সঠিক ব্যবস্থাপনা আপনারা
করতে পারেন না অথচ বড় বড় কথা বলেন। আর ইতালির লোম্বারদিয়া শহরের এক
হাসপাতালে একদিনে ৩৫০ জন মানুষ মারা গেছে, তারা ঠিকই সঠিক ব্যবস্থাপনা
করেছে। আপনাদের হাসপাতালে এই অবস্থা হলে আপনারা তো হাসপাতাল ছেড়ে পালাবেন।
এত
বড় অব্যবস্থাপনা ঢাকা মেডিকেল কলেজের মত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এদেশের
মানুষ আশা করেনা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা করোনা রোগীর ভর্তি এবং
চিকিৎসা নিয়ে প্রটোকল বানাচ্ছে অথচ উনারাই প্রটোকল মানছেন না বা ভঙ্গ
করছেন। আরো একটি নিউজে দেখলাম ৩০২ জন রোগী ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে
ভর্তি করানো হয়েছে, তারমধ্যে ৫৫ জন করোনা পজিটিভ। বাকী যেই ২৪৭ জন রোগী আছে
তারা করোনা পজিটিভ রোগীদের সাথে একই বাথরুম ব্যবহার করছেন, একই ওয়ার্ডে
থাকছেন। ১৪ দিন পর এই সাধারণ রোগীরা করোনা এফেক্টটেড হওয়ার সম্ভাবনা খুবই
বেশি। এই সাধারণ রোগী যারা করোনা নেগেটিভ তাদের আপনারা কোথায় চিকিৎসা দিবেন
বা ওদেরকে কোথায় কোয়ারেন্টিনে রাখবেন। সেই প্ল্যান বা ব্যবস্থা কি করেছেন?
মৃত ব্যক্তির স্যাম্পল পরীক্ষা করার সদিচ্ছা আপনাদের নাই, আপনাদের মৃত ব্যক্তির স্যাম্পল কালেকশন করার সক্ষমতা নাই, তাহলে শুধুমাত্র ক্রেডিট নেয়ার জন্য করোনা ইউনিট কেন খুলবেন? এটা দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। দেশের এক নম্বর মেডিকেল কলেজের সক্ষমতা যদি এই লেভেলে থাকে তাহলে সেই জাতির কপালে কি পরিমাণ দুর্গতি লেখা আছে তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
সঠিক পরিকল্পনা না নিয়ে কোভিড-১৯ ইউনিট খোলা
মানে পুরা আত্নঘাতী সিদ্ধান্ত। সারা বাংলাদেশে আপনারা করোনা ছড়াচ্ছেন। এত
বড় একটি অব্যস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা দেশের এই পরিস্থিতিতে কোনভাবেই কাম্য
নয়।
–
মেডিকেল অফিসার ও রেসিডেন্ট
কার্ডিওলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ
