উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এবার যোগ হয়েছে ছাত্রদলের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের শাস্তি চেয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপির সহযোগী সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

একই দিন উপাচার্যের ওপর ‘হামলার’ প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের শাস্তি ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিতে সচেতন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন করেছে ছাত্রলীগ। মিছিল করেছে বামপন্থী সংগঠনগুলোও।

আবার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ওই বিভাগের শখানেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মানববন্ধন করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে।

গত ১৫ জানুয়ারি সাত সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের চড়াও হওয়ার পর মেয়েদের যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষা্র্থীবৃন্দের ব্যানারে আন্দোলনে নামে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো।

আর ২৩ জানুয়ারি বামপন্থীরা উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাওয়ে গেলে সেখানে তুলকালাম হয়। অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধারে যাওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতির এক পর্যায়ে রড হাতে বেদন পিটুনি দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা।

এর প্রতিবাদে পরদিন ২৯ জানুয়ারি দেশ জুড়ে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো।

একই দিন আবার সচেতন শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে উপাচার্যের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের দাবিতে মাঠে নামে ছাত্রলীগ।

ছাত্রদলের মিছিল, সমাবেশ

উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাওয়ে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিচারের দাবিতে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের বিক্ষোভ করে ছাত্রদল।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শামসুননাহার হল হয়ে ছাত্রদলের একটি মিছিল যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মাহদী তালুকদার ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘ছাত্রদল সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। শিক্ষার্থীদের যোক্তিক দাবি আদায়ে আমরা সবর্দা সোচ্চার থাকব।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছে না ছাত্রদল। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নানা সময় ক্যাম্পাসে ঢুকার ঘোষণা দিয়েও সফল হয়নি। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের আশেপাশে ঝটিকা কর্মসূচি পালন করে তারা।

ছাত্রলীগের মানববন্ধন

উপাচার্যের ওপর আক্রমণ, শিক্ষার্থীদের শারীরিক লাঞ্ছনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করা, কর্মচারীদের মারধর ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ‘সচেতন শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে বেলা ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয় সংগঠনের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কেন্দ্রীক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা তাদের স্ব-স্ব ব্যানারে অংশ নেন।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কয়েকশ নেতাকর্মী মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বামপন্থীদের তিরস্কার করে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে।’

সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকদের মানববন্ধন

মঙ্গলবার উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে হামলায় যারা আহত হয়েছিলেন তাদের বেশ কয়েকজন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র।

এই হামলার প্রতিবাদে সকালে সকালে অপরাজেয় বাংলা পাদদেশে মানববন্ধন করে বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্ররা মুখে কালো কাপড় বেধে ও কালো ব্যাচ পরে অংশ নেয়।

হামলার ঘটনাটিকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক আখ্যা দিয়ে বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘তারা এই আন্দোলন সামলাতে পারেননি, তাই আজকে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’

মাহমিদুল হক বলেন, ‘যারা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তারা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের অধিকার আছে দাবি নিয়ে আন্দোলন করার।’

ছাত্রলীগের নিপীড়নের বিচার দাবি ছাত্রফ্রন্টের

ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচারের দাবিসহ ৪ দফা দাবিতে দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের নেতাকর্মীরা।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তারা এই শোভাযাত্রা বের করেছিল। তবে শোভাযাত্রাটির স্লোগানে ছিল প্রতিবাদের সুর।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031