বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে একটি ‘খোলা চিঠি’ লিখছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। আগামী ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনে এই চিঠি হস্তান্তর করা হবে।

দুপুরে রাজধানীর মুক্তিভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা জাতীয় কমিটির বক্তব্যকে পাত্তা দিচ্ছে না সরকার। এই পরিস্থিতিতে ভারতকেই চিঠি দেয়ার কথা জানিয়েছে কমিটি।

জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ‘প্রস্তাবিত বিদ্যুতকেন্দ্রর কারণে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবন আক্রান্ত হলে ভারতের সুন্দরবনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণেই বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষ থেকে এই প্রকল্প বাতিলের উদ্যোগ নেবার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘খোলা চিঠি’ দেয়া হবে।’

জাতীয় কমিটির দাবি, সুন্দরবন লাগোয়া এলাকা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবন এবং পশুর নদীর ক্ষতি করবে। সরকার অবশ্য এই দাবিতে অবৈজ্ঞানিক দাবি করে জানিয়েছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই স্থাপনা সুন্দরবন বা পশুর নদীর কোনো ক্ষতি করবে না।

এরই মধ্যে এই প্রকল্পের মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতীয় কোম্পানি ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের (বিএইচইএল) সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এক দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে তারা।

তবে জাতীয় কমিটির নেতা আনু মুহাম্মদ বলছেন, রামপালের পক্ষে সরকার যে যুক্তি দিচ্ছে, সেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্ব এবং বাংলাদেশের একজন বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাবে না যিনি মনে করেন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘কেবল আমরা না, জাতিসংঘের ইউনেস্কোও এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের সুপারিশ করেছে।’

ইউনেস্কোর প্রতিবেদক জাতীয় কমিটির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে- সরকারের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় কিমিটির সদস্য সচিব বলেন, ‘এটা শতভাগ মিথ্যা কথা। ইউনেস্কোর প্রতিনিধি দল যে কয়দিন বাংলাদেশে ছিল তারা সরকারের লোকদের সঙ্গেই ছিল, তাদের কথাই শুনেছে। আমাদের সঙ্গে তাদের দেখাই হয়নি।’

দেশ ধ্বংসকারী প্রকল্পের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক নেই।’ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করতেই রামপাল বিরোধী আন্দোলন এমন প্রশ্নের জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘রামপালকে আমরা উন্নয়ন প্রকল্পই মনে করি না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘রামপাল নিয়ে বিএনপি ও তাদের শরিক দল কী ভাবছে তা আমাদের দেখার বিষয় না। বিএনপি ভারতবিরোধী আন্দোলনের আভাস দিচ্ছে কি না তাও জানি না। আমরা ভারত বিরোধী নই। আমরা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার ভারত, চীন বা রাশিয়ার স্বার্থ দেখছে, কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থ দেখছে না।’

রামপাল বিরোধী আন্দোলনে সরকার পদে পদে বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আনু মুহাম্মদ। বলেন, ‘সুন্দরবন বিনাশী বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি অভূতপূর্ব মাত্রা লাভ করলেও সরকার সিদ্ধান্ত নিতে কালক্ষেপণ করছে এবং মিথ্যাচারের পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি মোশরেফা মিশু প্রমুখ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031