চিকিৎসকের কাছে অসুখে-বিসুখে সবাইকে শরণাপন্ন হতে হয় । রোগভেদে চিকিৎসক বদলের মতো এই ‘মানবিক’ পেশাজীবীদের নিয়ে রোগীদেরও অম্ল-তিক্ত কিংবা স্বস্তির নানান অভিজ্ঞতা হয়। আবার এমন কোনো কোনো চিকৎসক রয়েছেন যাদের নিয়ে নানা রকম শংসার ফুল ফোটে মানুষের মুখে। এমনই একজন ‘সদালাপী’, ‘ভালো’ আর ‘মানবিক’ চিকিৎসক’ এবিএম আবদুল্লাহ।

বলা হয়ে থাকে, রোগ নিয়ে গেলে ডাক্তারের আলাপনেই সারিয়ে তোলে অসুখের অনেকটাই। আমাদের সকলের ডাক্তার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া আবদুল্লাহ শুধু তেমনই নন, বরং জাতির দুর্যোগে কখনো মুদ্রিত অক্ষরে, কখনো ছোট পর্দায় ভেসে ওঠেন তিনি। সহজ করে কঠিন রোগের পথ্য বাতলে দেন। নির্ভরতা পান সবাই।

বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেবে আসা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সরব রয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। নিয়মিত দিচ্ছেন স্বাস্থ্য পরামর্শ। উপকৃত হচ্ছে দেশবাসী। ফলে এই সময়ে তার ব্যস্ততা বেড়েছে আরও।

চোখেমুখে সারল্যের আভা ছড়ানো এই চিকিৎসক বেড়ে উঠেছেন যমুনা আর ব্রহ্মপুত্রের তীরে। জামালপুর জেলায় ১৯৫৪ সালে তাঁর জন্ম। স্বভাবগুণে যে সারল্য আর মানবপ্রীতি রয়েছে তা বোধহয় এই নদীবিধৌত এলাকাগুণেই।

ইসলামপুর উপজেলার হাড়িয়াবাড়ী গ্রামের আমেনা খাতুন ও এটিএম মঞ্জুরুল হকের সন্তান এখন সুস্বাস্থ্যের স্বপ্ন দেখান ১৭ কোটি মানুষকে। শিক্ষাজীবনে বরাবরই মেধা তালিকায় হয়েছেন প্রথম।

১৯৯২ সালে লন্ডনের রয়েল কলেজ থেকে এমআরসিপি এবং ২০০৩ সাল থেকে এফআরসিপি ডিগ্রী শেষে পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন তৎকালীন আইপিজিএম অর্থাৎ এখনকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। প্রচন্ড মেধাবী মানুষটি চিকিৎসক সমাজে সুনাম কুড়িয়েও বরাবরই উপেক্ষা করেছেন দেশের বাইরে থাকার সুযোগ। সুস্বাস্থ্যের স্বপ্ন দেখানো এবিএম আব্দুল্লাহ চিকিৎসার বাইরে অসাধারণ একজন মানুষও ।

মার্জিত এই মানুষটি কাজের ভিড়ে ভোলেননি সংসার। স্ত্রী মাহমুদা বেগম আর মেয়ে সাদিয়া সাবাহ এবং ছেলে সাদী আব্দুল্লাহকে নিয়ে সংসারের ছোট্ট ভুবনেও দায়িত্বশীল তিনি। মূল্যবোধ শিখিয়েছেন সন্তানদেরও। বাবার যোগ্য সন্তানেরাও হয়েছেন মানবিক গুণসম্পন্ন চিকিৎসক।

রোগীর আরোগ্য লাভের পাশাপাশি ডা. আবদুল্লাহ নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক। তৈরি করেছেন মসজিদ ও মাদ্রাসা। এছাড়াও নকল ওষুধ আর ভেজাল বিরোধী আন্দোলনেও সোচ্চার সবসময়।

ষাটোর্ধ্ব এই মানুষটি স্বাক্ষর রেখেছেন সৃজনশীল লেখালেখিতেও। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার নিয়ে লিখেছেন নিবন্ধ। আর চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে লেখা তো আছেই। বিশেষ পারঙ্গমতার পরিচয় দেয়া চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত চল্লিশটিরও বেশি নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে।

সুনামের পাশাপাশি পেয়েছেন স্বীকৃতি। জীবনের ঝুলিতে Short Cases in Clinical Medicine গ্রন্থের জন্য ২০১৩ সালে যোগ হয়েছে ইউজিসি পুরস্কার। এছাড়াও ২০১৬ সালে জাতীয় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক।

আর ২০১৭ সালে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে বাংলা একাডেমি। জীবন্ত কিংবদন্তী এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বরাবরই গুরুত্ব দেন রোগ প্রতিরোধের ওপর। করোনার আগে দেশে ডেঙ্গুর বিস্তর বিস্তার যেন না ঘটে সে বিষয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখির পাশাপাশি সরব উপস্থিতি পাওয়া গেছে পর্দায়। করোনায় মুক্তি মিলতে জনসচেতনতায় গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কি পরামর্শ থাকবে অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘করোনা একটা নতুন রোগ। এটার কোনো চিকিৎসা কিংবা ভ্যাকসিন নাই। এজন্য জনমনে এটা বড় দুচিন্তার বিষয়।’

‘করোনা যেহেতু ছোঁয়াচে তাই খুব সচেতন থাকতে হবে। সাধারণ জ্বর কাশির মতোই এটার লক্ষণ- তাই একেবারে গুরুত্ব না দিয়ে বসে থাকলে হবে না। আবার আতঙ্কগ্রস্তও হওয়া যাবে না। তাই সচেতনতাই মূল কথা। রোগ থাকবেই, আমাদেরও নিয়ম মেনে চলতে হবে।’

বিদেশ থেকে আগতরা সর্দি-কাশিতে ভুগে থাকলে সেটা চিন্তার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদেশফেরতদের আশেপাশের কারো সর্দি কাশি দেখা দিলে এটা নিয়ে ভাবতে হবে।’

করোনা থেকে সতর্ক থাকার বিষয়ে তার পরামর্শ ‘এটা কিন্তু ভারী ভাইরাস তাই বাতাসে ছড়ায় না। হাঁচি-কাশির যেখানে পড়ে থাকে সেখান থেকে ছড়ায় তাই ঘর-অফিসের আসবাবপত্র এগুলো নিয়মিত জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।’

‘আবার হাত অনেক কিছু ব্যবহারে হাত দরকার হয় তাই সেখানেও লেগে থাকে। ফলে হাতের মাধ্যমে ছড়ায় বেশি। তাই দিনে কয়েকবার ভালোভাবে ধুতে হবে। এছাড়া বাইরে থেকে ঘরে ঢুকেই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তারপর অন্য কিছু ধরতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এমনিতেই অর্ধসিদ্ধ খাইনা; তারপরেও খুব ভালো সিদ্ধ করতে হবে। তরকারি অবশ্যই ভালোভাবে ধুতে হবে। ডিম খেলে অবশ্যই ভালোভাবে ভাজি করতে হবে। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

শুষ্ক গলায় করোনাভাইরাস বেশি আক্রান্ত করে থাকে উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘অল্প অল্প পানি কিছুক্ষণ পর পর খেতে হবে, যাতে গলাটা ভিজে থাকে।’

গৃহপালিত পশু-পাখির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘গরু ছাগল হাঁস মুরগি যে ধরনের গবাদি পশু-পাখি থাকুক না কেন যদি রোগাক্রান্ত থাকে তাহলে সরিয়ে রাখতে হবে। তাদের একান্তই পরিচর্যা করতে হলে মাস্ক গাউন এগুলো পড়ে নিতে হবে তারপর অবশ্যই ভালো হবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।’

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে নিজে সতর্ক থেকে অন্যকেও সতর্ক রাখার পরামর্শ দেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031