গতকাল সাক্ষ্য দেন ৫নং সাক্ষী হাফেজ মো. আমিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় । তবে আসামি সাবেক ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্তের দাবি, এই সাক্ষী (আমিন) একজন রোহিঙ্গা। পাশের শামলাপুরের ২৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক। বিদেশি নাগরিক হিসেবে তার সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ আছে কিনা- প্রশ্ন রাখেন এ আইনজীবী। এদিকে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কারাগারে ডিভিশন চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন তার আইনজীবী। আদালত এ ব্যাপারে কারাবিধি মতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনটি মামলার নথিভুক্ত করার আবেদনও জানানো হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। সে সঙ্গে গতকাল শেষ হয় ৫নং সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ। এ মামলার ৫নং সাক্ষী ঘটনাস্থলের পাশের মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ মো. আমিন সেই রাতে তার দেখা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন আদালতে। মসজিদের ছাদে উঠে আরও ১০-১২ জন ছাত্রসহ ঘটনা দেখা, গুলির শব্দ শোনার কথা জানান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রীয়। এটি জুডিশিয়াল নয়। তবে আদালত চাইলে এটা তলব করতে পারেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আদালতের। এর আগে
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজনভ্যানে করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়। সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে পঞ্চম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি সাক্ষ্য দেন। এর পর শুরু হয় আসামি পক্ষের আইনজীবীদের জেরা। যা চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এর পর গতকালের মতো আদালত মূলতবি হয়ে যায়।
আদালতে উপস্থিত থাকা আইনজীবীরা জানান, মামলার ৫নং সাক্ষী ঘটনাস্থলের পাশের মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ মো. আমিন আদালতে জানান, তিনি মসজিদের ছাদ থেকে প্রায় পুরো ঘটনা দেখেছেন। সে রাতে নিজের চোখে যা যা দেখেছেন সব আদালতকে জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলার প্রথম দফার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সাহেদুল সিফাত। রবিবার দ্বিতীয় দফায় প্রথম দিনে মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী মোহাম্মদ আলীর এবং সোমবার আদালতে চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে কামাল হোসেনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। মামলায় আরও ৭৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গত বছর ১৩ ডিসেম্বর র?্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।
