আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে এলাহী খান এ আদেশ দেন। তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত আগামী রোববার এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন।রংপুরে প্রতিবন্ধী রিকশাচালক নাজমুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রংপুরে এক প্রতিবন্ধী রিকশা চালককে মারধর করে হত্যার অভিযোগ ওঠে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা ঘটেছে নগরীর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কোর্টপাড়ায়। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত লালমনিরহাটের বাসিন্দা পুলিশ সদস্য আবু তায়েব মোঃ হাসান কোর্টপাড়া এলাকায় জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। তিনি কয়েকটি রিকশা কিনে চালকদের মাধ্যমে ভাড়া খাটান। হাসানের একটি রিকশা চালাতেন ৩ সন্তানের জনক স্থানীয় প্রতিবন্ধী নাজমুল (৩২)। কয়েক দিন আগে নাজমুলের রিকশাটি চুরি হয়ে যায়।

এ ঘটনাটি জানালে হাসান চুরির দায় নাজমুলের উপর চাপিয়ে সে রিকশা বিক্রি করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করে। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে নাজমুলকে নিজ ঘরের একটি কক্ষে নিয়ে এসে বেধড়ক মারপিট করে হাসান। নাজমুল ছেড়ে দেয়ার আকুতি জানালেও হাসান মারপিট করতে থাকে। এ সময় নাজমুলের স্ত্রী ও তার সন্তান নাজমুলের উপর অত্যাচার দেখে তাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করে। তারপরেও নাজমুলকে বেধড়ক মারতে থাকেন হাসান এবং চুরির দায় স্বীকার করতে বলেন। মারপিট থেকে বাঁচতে ভয়ে নাজমুল এক পর্যায়ে নিজে চুরি করেছে বলে দায় স্বীকার করেন। এরপর হাসান পুলিশের হাতে নাজমুলকে তুলে দেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, রাতে পুলিশের হাতে দেয়ার পর আবার হাসান নাজমুলকে নিজ বাড়িতে এনে মধ্য রাত থেকে সারারাত মারধর করে। প্লাস দিয়ে তার হাতের নখ তুলে ফেলা হয়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠির আঘাতের ফলে নির্যাতন সইতে না পেরে নাজমুলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হাসানের বাড়ির ফ্যানের রডে রশি দিয়ে নাজমুলকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসীরা ছুটে আসে। এলাকাবাসীর উপস্থিতি টের পেয়ে হাসান কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে হাসানের স্ত্রীকে আটক করে তাজহাট থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় নাজমুলের স্ত্রী বাদী হয়ে তাজহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে হাসানের শাস্তির দাবিতে বুধবার সন্ধ্যায় রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করে। আজ বৃহস্পতিবারেও আন্দোলন করেন এলাকাবাসী। এই শাস্তির দাবিতে আজ পল্টন মোড়ে মশাল মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্র অীধকার পরিষদও। এই মশাল মিছিলের নেতৃত্ব দেন ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

রংপুরের বাসিন্দা নাসিমা (৩২) বলেন, পুলিশের ঘরে যদি লাশ পাওয়া যায় তাহলে সাধারণ মানুষের ঘরে কি পাওয়া যাবে। একজন পুলিশের লোক হয়ে এভাবে একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে পিটিয়ে মারতে পারে না। বউ-বাচ্চাকে দাঁড় করিয়ে নাজমুলকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। আমরা হাসানের ফাঁসি চাই।

আনিসুল হক (৪৫) বলেন, নাজমুলের বউকে নিয়ে গেছে পুলিশ। আগে তাকে উদ্ধার করে নাজমুলের পাঁচ মাস বয়সী বাচ্চার একটা গতি করতে হবে। স্বামীকে পুলিশ মারছে এখন বউকেও মারতে পারে বলে আমরা সন্দেহ করছি। নাজমুল রিক্সা চুরি করে নাই। প্লাস দিয়ে তার নখ টেনে ছিড়ে ফেলেছে। তখন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বলছে আমি চুরি করেছি। এরপর রাতে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় তাকে। আমরা সকালে এসে দেখি হাসানের ঘরে ঝুলে আছে নাজমুলের মরদেহ। এ ঘটনায় পুলিশের সদস্য হাসান, তার স্ত্রী তাজহাট থানায় পুলিশী হেফাজতে রয়েছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শহীদুল্লাহ্ কাওসার বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশটি প্রেরণ করা হবে ময়না তদন্তের জন্য। ময়না তদন্ত হলে বোঝা যাবে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে সে ছাড় পাবে না।

গতকাল বুধবার রাতে নাজমুলের স্ত্রী শ্যামলী বেগম বাদী হয়ে পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031