বাংলাদেশসহ সকল উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান কর্মসূচি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। স্বাস্থ্য সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে যেমন এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার তৈরী হয়েছে তেমনি চাহিদার বেলায়ও ঝুঁকির মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে করোনাভাইরাস মহামারীকালীন সময়ে । বিশ্ব ব্যাংকের একটি পরিসংখানে দেখা গিয়েছে যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে করোনা সৃষ্ট মারাত্মক ভাঙ্গনের ফলে বাংলাদেশে প্রায় ১৭ লক্ষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু মুখে খাওয়ার যোগ্য এন্টিবায়োটিক সিরাপ পাবে না, ৩৭ লক্ষ শিশু ডিপি টি ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে থাকবে, ৪ লক্ষ প্রসূতি মা সেবা কেন্দ্রে নিরাপদ সন্তান প্রসবের সুবিধা পাবে না, এবং ৬০ লক্ষ বিবাহিত যুগল পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী থেকে বঞ্চিত হবে৷ অতি প্রয়োজনীয় এই সব স্বাস্থ্য সেবার অভাবের কারণে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, আর মাতৃ মৃত্যুহার ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং করোনা মহামারীকালীন সময়ে সকল ধরনের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা অতি জরুরি। যাতে করে কোথাও কোনো সমস্যার ঝুঁকি দেখা দিলে অতি দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
সরবরাহের ভাঙ্গনের প্রধান কারণ হলো, করোনা নিয়ন্ত্রণে সীমাহীন অব্যবস্থাপনার কারণে ডাক্তার নার্সসহ সকল ধরনের স্বাস্থ্য কর্মীদের স্বল্পতা, পিপিই’সহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সময়মতো সঠিক সেবা প্রদানে অনীহা, সামাজিক ও অন্যান্য নিগ্রহের ভয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে সেবা প্রদানের দুর্বল মানসিকতা এবং করোনাকালে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে পরিবহন বিপর্যয়ের কারণে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সামগ্রী এবং ওষুধের অভাব। আমরা যদি স্বাস্থ্য সেবার চাহিদার দিকটি একটু বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো, জনসংখার একটি বিশাল অংশ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে মোটেই আগ্রহী নয়। অনাগ্রহের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, করোনার কারণে বিশেষ করে লকডাউন অবস্থায় রাস্তাঘাটে যাতায়াতের জটিলতা এবং স্বল্প আয়ের পরিবারের কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে আর্থিক অস্বচ্ছলতা।
