আমি বরাবরই যে কোনো বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝে উদ্বিগ্ন হয়ে যায়। তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার সময় আমার উদ্বিগ্নতা দেখে কে!

আমার দুই বন্ধু শামিম ও আমিনুর আমাদের হল থেকেই বেশির ভাগ সময় পরীক্ষা দিত। আমিনুর ঢাকা থেকে আসতো, তেমন বেশি ক্লাস করতো না শুধু বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতো।

শামিম সাংবাদিকতা করতো। ফলে ব্যস্ত সময় পার করতো ক্যাম্পাসে। কিন্তু দুই জনই ছিল চরম মেধাবী। ১/২ ঘন্টা পড়লে তাদের পড়া শেষ হয়ে যেত। আর আমার বারবার পড়তে হত, মনে হত প্রশ্ন বুঝি কমন পাব না! এক ধরনের ভয় মনের মধ্যে কাজ করতো সবসময়।

হল ছাড়ার পর গাজীপুরের একটি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করি। বেশ ভালই সময় কাটছিল। শিক্ষকতা পেশার প্রতি আমার একধরণের দূর্বলতা ছিল বরাবরই। ক্যাম্পাসে ছাত্র ছাত্রীদের হৈ হুল্লোল, ক্লাসে মজার মজার ঘটনা আমাকে বেশ আনান্দ দিত।

আমাদের প্রতিষ্ঠানটা গাজীপুরের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় মেধাবীদের পদচারণায় মুখরীত থাকতো সারা ক্যাম্পাস। এবারও এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাশের সাফল্য দেখিয়েছে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমার সহকর্মীরাও ছিলেন আনেক আন্তরিক ফলে জাবির হল ছড়ার বেদনা কিছুটা হলেও লাঘব হত। কিন্তু বেশি দিন যেতে না যেতেই দেশে দুঃসংবাদের বার্তা নিয়ে আসলো করোনা।

সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো, আমিও বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে আসার পর আমি একটু অসুস্থ হয়ে যায়, এদিকে দিনে দিনে সারা দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বারতে থাকে আমার করোনা ভীতি। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র, জুনিয়র ভাইয়া আপুদের আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি ও মৃত্যু আমাকে মানুষিক ভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়।

গত তিন তারিখ সকালে আমার সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা সহ জ্বর জ্বর ভাব লক্ষ করি। পরদিন দুপুরে আমার গলা ব্যাথা দেখা দেয়। এলার্জি থাকায় ঠান্ডার ভাবটা সবসময়ই ছিল, শ্বাস কষ্টে ও বুকের ব্যাথায়ও ভুগছিলাম। ফলে করোনা পরীক্ষা করাটা প্রয়োজন বোধ করলাম।

আমাদের মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা অত্যান্ত আন্তরিকতার সাথে আমার কথাগুলো শুনলেন এবং নমুনা সংগ্রহ করলেন। ডাক্তাররা এখন সামনের সারির যোদ্ধা, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা রোগীদের সেবা করে যাচ্ছে। ফলে আনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মৃত্যু বরণও করেছেন কিন্তু তারা হাল ছাড়েননি সব কিছুর ঊর্ধে উঠে মানুষের সেবাই নিজিদের নিয়োজিত রেখেছে।

গত কাল রাত্রে মোবাইল ফোনের এসএমএস -এর মাধ্যমে আমাকে জানালেন আমার করোনা নেগেটিভ। মানুষিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছিল আমি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসার আগ পর্যন্ত।

করোনার কোনো টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা ও মানুষিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়াই এখন মূখ্য কাজ। কারন দূর্বল মানুষিকতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মনকে করে অশান্ত। ফলে মানুষের মাঝে হতাশা বাসা বাঁধে।

করোনাকালে মানুষিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আমরা বেশ কয়েকটি কাজ করতে পারি। প্রথমত ধর্ম চর্চা, যারা ইসলাম ধর্মের তারা নামাজ পড়ার সাথে বিভিন্ন দোয়া ও কোরআন শরিফ পরতে পারে নিয়মিত ফলে মন ও যেমন ভালো থাকবে তেমনই আল্লাহ নৈকট্যও লাভ করা যাবে। অন্য ধর্মের মানুষও তাদের নিজ নিজ ধর্মের আচার- অনুষ্ঠান পালন করতে পারে।

করোনা সম্পর্কিত নেগেটিভ সংবাদ দেখা পরিহার করতে হবে। মেয়েরা বাড়িতে মায়ের রান্নার কাজে সাহায্য করতে পারে এবং ছেলেরা বাবা ও পরিবারের অন্যান্য কাজে সহায়তা করলে তাঁদের সময় কেটে যাবে এবং করোনা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার সুযোগ পাবেনা। অবসর সময়ে বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে, শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্য বই পড়ে ক্লাসের পড়া এগিয়ে রাখতে পারে। বাড়ীর পাশে, ছাদে বিভিন্ন ফলমূল, সবজির চাষ করে পরিবারের খাদ্যের চাহিদা কিছুটা হলেও মেটানো যেতে পারে।

এছাড়া প্রতিবেশি, আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলা ও করোনার স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা যায়। কারোর মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে সাহায্য করতে হবে, তাঁদের মনে সাহস যোগাতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনা মানেই মৃত্যু না।

প্রতিদিন সকালে শরীরে কমপক্ষে ২০ মিনিট রোদ নেওয়া, শারীরিক ব্যায়াম, ভিটামিন সি ও ডি গ্রহণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে। নিয়মিত গরম পানি গড়গড়া, আদা লেবু মধু ও বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে চা পান করলে শরীর ও মনকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা করোনা প্রতিরোধের প্রাচীর তৈরি করতে পারবো।

লেখক: মো. শাহিন রেজা, শিক্ষক

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031