পুলিশ-র্যাব ও সেনা সদস্যরা বিদেশফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে ও সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে সচেতনতামূলক রোবাস্ট পেট্রোল করেছে। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) কার্যালয় থেকে শুরু হওয়া যৌথ টহল শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, মানিক মিয়া এভিনিউ, হাতিরঝিল, শেরেবাংলা নগর হয়ে তেজগাঁও ডিসি অফিসে এসে শেষ হয়।
শুক্রবার সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া এ পেট্রোল চলে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। পুলিশ-র্যাবের মোটরসাইকেল সাইরেন বাজিয়ে রোবাস্ট পেট্রোলের সামনে নেতৃত্ব দেয়। আর পেছনে তিনবাহিনীর প্রায় শতাধিক গাড়ি লাইন ধরে চলতে থাকে। এসময় মাইকে সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকতে আহ্বান করা হয়। মাইকে- ঘরে থাকুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমান, নিজে বাচুন অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করুন, বিদেশ থেকে এলে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকুন ইত্যাদি সচেতনতামূলক কথা বলা হয়।
ডিএমপির পক্ষ থেকে টহলের নেতৃত্ব দেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব বিজয় তালুকদার। এসময় র্যাবের নেতৃত্বে ছিলেন এসপি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী এবং আর্মড ফোর্সেসের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন মেজর বেলাল।
সার্বিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব বিজয় তালুকদার। তিনি বলেন, সরকারের নিদেশনা অনুযায়ী র্যাব, আর্মড ফোর্সেস ও পুলিশ মিলে যৌথ টহলের আয়োজন করা হয়েছে তেজগাঁও বিভাগ থেকে। মানুষকে সচেতন করছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনারা ঘরে থাকুন নিরাপদে থাকুন। আর সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে চলুন।
বিভিন্ন জেলায় পুলিশকে লাঠিচার্জ ছাড়াও কঠোর হতে দেখা গেছে ঢাকাতে এমন কোনো অবস্থা তৈরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রধান সড়কগুলো ক্লিয়ার রাখতে পারছি কিন্তু গলিতে গলিতে মানুষ ঠিকভাবে মানতে চাচ্ছে না। সেখানে আমরা তাদেরকে বলার চেষ্টা করছি আপনার ঘরে থাকুন। আমরা এখনও বল প্রয়োগ করিনি। চেষ্টা করছি ভালোভাবে বলে যাতে এটা মানতে বাধ্য করাতে পারি।

প্রবাসীরা হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকছে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে থানায় থানায় তথ্য জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেটার সবশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তেজগাঁওয়ের ডিসি বলেন, দেশের বাইরে থেকে যারা দেশে আসছেন, তাদের তথ্যটা ইমিগ্রেশন হয়ে পুলিশ সদরদপ্তর হয়ে আমাদের কাছে আসছে। সেই অনুযায়ী আমরা খোঁজ খবর রাখছি। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। আমরাও তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি।
এদিকে বাংলাদেশে নতুন করে আরও চারজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে দুইজন চিকিৎসক।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কারও মৃত্যুর তথ্য না আসায় মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতই পাঁচজন বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর।
গোটা বিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের আক্রমণে কাঁপছে। সবশেষ হিসাবে, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। মারা গেছেন ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এখন পর্যন্ত করোনায় নিহতের সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৩ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৮১৯ জন। অপরদিকে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৪২ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৭৯১ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ হাজার ৭৮৪ জন নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ইতালিতেই গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭১২ জনের।
মৃত্যুর তালিকায় ইতালির পরই রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। সেখানে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ হাজার ৩৬৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭১৮ জনের। দেশটিতে মোট আক্রান্ত হাজার ৫৭৭৮৬ জন।
