ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নারী নেত্রীদের ভাগ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে দরিদ্র গর্ভবতী নারীদের শিশুর পুষ্টিসহ বাড়তি খাবারের জন্য সহায়তা ভাতা থেকে । এসব উপকারভোগীর কাছ থেকে দেড় থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের শিশুর পুষ্টিসহ বাড়তি খাবারের জন্য দেশের সব কটি পৌরসভায় ‘ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি’ চালু করে সরকার। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিভিন্ন নারী সংগঠনের মাধ্যমে ৮৫০ জন গর্ভবর্তী নারীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। ২ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ৬ মাস অন্তর প্রতি গর্ভবতী নারীকে ৩ হাজার করে চার কিস্তিতে মোট ১২ হাজার টাকা দেয়ার কথা রয়েছে।
২০১৬ সালে তালিকাভুক্ত নারীদের প্রথম কিস্তির টাকা গত রোববার অগ্রণী ব্যাংক চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার মাধ্যমে বিতরণ শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির কথা বলে উপকারভোগীদের কাছ থেকে দেড় হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নারী নেত্রীরা।

গতকাল মঙ্গলবার অগ্রণী ব্যাংক চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখায় উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা মেলে অভিযোগের। বেলা ১১টার দিকে ব্যাংকের নিচতলায় উপকারভোগীদের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা করে তুলছিলেন ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহসান হাবিবের সহযোগী বশির। বশির জানান, সকালে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহসান হাবিব ৩০ জন নারীর একটি তালিকা দিয়ে তাকে ব্যাংকে পাঠিয়েছেন সবার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা করে তোলার জন্য। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন বশির।

উপকারভোগীর তালিকায় নাম থাকা দুর্গাপুর গ্রামের সাজেনুর খাতুন, সাবিনা ইয়াসমিন, মহলদারপাড়ার আদরি বেগম, তাঁতিপাড়ার রোজিনা খাতুনসহ আরো অনেকে অভিযোগ করেন, তালিকা তৈরির সময় তাদের দেড় হাজার টাকা করে দিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহসান হাবিব। ওই দিন ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর কাউন্সিলরের সহযোগী বশিরকে তারা দেড় হাজার টাকা করে দেন।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, শুধু ৫ নম্বর ওয়ার্ডই নয়, পৌর এলাকার প্রায় সব ওয়ার্ডেই এ রকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পাশাপাশি তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য নারী কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেত্রীরাও উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। কোথাও কোথাও তালিকা তৈরির সময়ই উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে।

টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেননি ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহসান হাবিব। তবে তিনি বলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য এই টাকা তোলা হচ্ছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, প্রত্যেকের টাকা তিনি ফিরিয়ে দেবেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সাহিদা আখতার জানান, এমন অভিযোগ তিনিও পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম জানান, কেউ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031