র‌্যাব সম্পত্তির লোভ ও পারিবারিক কোন্দলের কারণেই রাজধানীর কাকরাইলের জোড়া খুন হয়েছে বলে জানিয়েছে । শনিবার বিকালে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন এই তথ্য।

এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের নিজবাড়ি থেকে নিহত শামসুন্নাহারের স্বামী আবদুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তার ভাই আল আমিন ওরফে জনিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় শামসুন্নাহার ও তার ছেলে শাওন খুন হন। ওই জোড়া খুনের ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ওই ঘটনার পরদিন নিহত শামসুন্নাহারের ভাই মো. আশরাফ আলী বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর-২। ওই মামলায় এজাহারনামীয় আসামি মো. আবদুল করিম তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা এবং মুক্তার ভাই আল আমিন ওরফে জনিসহ আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আবদুল করিম এবং শারমিন আক্তার মুক্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ওই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পর র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাবের তিনজনের একটি দল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থানার মালাদিয়া গ্রামের মৃত মুজিবুর রহমানের ছেলে আল আমিন ওরফে জনিকে গ্রেপ্তার করে।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আল আমিন হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আল আমিন র‌্যাবকে জানান, ওই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যে গত ৩১ অক্টোবর অর্থাৎ ঘটনার একদিন আগে নিউমার্কেটের একটি দোকান থেকে একটি ধারালো অস্ত্র ১১০০ টাকা দিয়ে কেনে বাসায় নিয়ে আসেন। ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে তিনি একটি ব্যাগে ওই ধারালো অস্ত্র, লুঙ্গি ও গেঞ্জি নিয়ে বাসা থেকে বের হন। ওই ব্যাগটি নয়াপল্টনের একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে রেখে ধারালো অস্ত্রটি কোমরে নিয়ে শামসুন্নাহারের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে বের হন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শামসুন্নাহারকে হত্যার উদ্দেশ্যে কাকরাইলের ৭৯/১ নম্বর বাসায় যান তিনি। বাসার কলিং বেলে চাপ দিলে বাসার গৃহকর্মী রাশেতা বেগম দরজা খুলে দেন এবং তিনি রান্নাঘরে ঢোকা মাত্র আল আমিন বাইরে থেকে দরজা লক করে দেন। এরপরই তিনি শামসুন্নাহারের রুমে হত্যার জন্য গেলে তার সন্তান শাওন তা দেখে ফেলেন। শাওনকে দেখা মাত্র আল আমিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কয়েকবার আঘাত করেন। তারপর তিনি শামসুন্নাহারের রুমে ঢুকে তাকে উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতের সময় শাওন তার মাকে রক্ষা করার জন্য কাছে এলে আল আমিন তাকে ওই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করেন। এরপরও তিনি আরও কয়েকবার শামসুন্নাহারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এসময় আল আমিন জনির দুইটি আঙ্গুলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি দেখেন শাওন বাসা থেকে বেরিয়ে সিঁড়িতে চলে গেছেন। তবে রক্তক্ষরণ হওয়ায় শাওন একটু পরই সিঁড়িতে পড়ে যান।

র‌্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর আল আমিন তার পোশাক পাল্টে ফেলেন। এরপর তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। চিকিৎসার টাকা না থাকায় রাত নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে যান। সেখানে ভুয়া নাম ‘মাসুদ’ ব্যবহার করে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে ঢাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় যান। পরদিন সকালে আত্মগোপনের জন্য আল আমিন গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ফেরি পার হওয়ার সময় রক্তাক্ত অস্ত্র ও পোশাক পদ্মা নদীতে ফেলে দেন।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, হত্যার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গ্রেপ্তার আল আমিন র‌্যাবকে জানান, তার বোন শারমিন আক্তার মুক্তা আবদুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী এবং নিহত শামসুন্নাহার আবদুল করিমের প্রথম স্ত্রী। বিগত প্রায় চার বছর আগে আবদুল করিম শারমিন আক্তার মুক্তাকে বিয়ে করার পর তার বোনকে নরসিংদী থেকে ঢাকার নয়াপল্টনের ৩৬/এ নম্বর বাড়িতে নিয়ে এসে একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে দেন। ওই ফ্ল্যাটে আল আমিন, তার মা ও তার সাত বছরের মেয়েসহ শারমিন আক্তার মুক্তা থাকতেন। আবদুল করিমের তৃতীয় বিয়ের বিষয়টি শামসুন নাহার জানতে পারলে পারিবারিক কোন্দল ও অশান্তির সৃষ্টি হয়। বিয়ের পর থেকেই তৃতীয়  স্ত্রীর সঙ্গে নিহত প্রথম স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছি। কারণ আবদুল করিমের বেশির ভাগ সম্পত্তি তার প্রথম স্ত্রী নিহত শামসুন্নাহারের নামে ছিল।

র‌্যাব জানায়, তিন থেকে চার মাস আগে প্রথম স্ত্রীর চাপে আবদুল করিম তার তৃতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ ধরনের ক্রমাগত মানসিক চাপে ঘটনার চার থেকে পাঁচ দিন আগে শারমিন আক্তার মুক্তা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ওইদিন আবদুল করিম ও তার ভাই আল আমিন তাকে আত্মহত্যা থেকে রক্ষা করেন। এ কারণেই আল আমিন শামসুন্নাহারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031