উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে নগরবাসীর দুর্ভোগে পরিণত হওয়া আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের । এতে ব্যয় হচ্ছে ৫৩ কোটি টাকা। তবে বর্ষার আগে কাজ শেষ হচ্ছে না। বর্ষার আগে গাড়ি চলাচলের জন্য উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। অপরদিকে সড়কের পাশে নালা আগের তুলনায় ছোট এবং অগভীর হচ্ছে। এতে করে বর্ষায় এই নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশন কতটুকু হবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন স্থানীয়রা। অবশ্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বলছে, পরিকল্পিতভাবেই সবকিছু করা হচ্ছে। আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের সাথে পোর্ট কানেক্টিং রোডের সংযোগের জন্য নির্মিত ২ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটিই এক্সেস রোড। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে হালিশহর, বন্দরসহ সন্নিহিত অঞ্চলের গাড়ি চলাচল করে। ব্যস্ততম এই সড়কটি জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। বর্ষার পানিতেও ডুবে। প্রায় প্রতিদিনই জলাবদ্ধতার কারণে সড়কটির অবস্থা শোচনীয়। শহরের সবচেয়ে খারাপ রাস্তা হিসেবে এটি চিহ্নিত হয়েছে। বড় বড় গর্ত এবং খানাখন্দে অনেকটা পরিত্যক্ত।
চসিক সড়কটির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ শুরু করেছে। ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তাটি বর্তমানের চেয়ে তিন ফুট উঁচু করা হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে নালা। এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে মাসখানেক আগে। বর্তমানে সড়কের পাশে নালা নির্মাণের কাজ চলছে। নালা নির্মাণ শেষে সড়ক সংস্কারের মূল কাজ শুরু হবে। নালা সংস্কার করার যে কার্যক্রম চসিক চালাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, আগে রাস্তার পাশে নালার প্রস্থ ছিল ১৪ ফুট। বর্তমানে নালার প্রস্থ কমিয়ে ১০ ফুট করা হচ্ছে। ১০ ফুট নালার দুই পাশে ২ ফুট আরসিসি ওয়াল বাদ গেলে পানি নিষ্কাশনের জন্য থাকছে আট ফুট জায়গা। আট ফুট নালায় পানি নিষ্কাশন ঠিকভাবে হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় মোহাম্মদ রফিক ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, দিনে দিনে পানির পরিমাণ বাড়ছে। অথচ সিটি কর্পোরেশন নালা ছোট করছে। আগে বড় নালা দিয়ে সব পানি নিষ্কাশিত হয়নি। এখন ছোট নালায় ভবিষ্যতে আমাদের কী অবস্থা হবে তা শুধু আল্লাহই জানেন।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং যথেষ্ট হিসাব–নিকাশ করেই রাস্তাটির সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। ইতঃপূর্বে বিভিন্ন সময় রাস্তাটিতে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ পানি উঠেছে, তার থেকে ছয় ইঞ্চি উঁচু করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে বর্তমানের চেয়ে তিন ফুট উঁচু হচ্ছে রাস্তা। ভবিষ্যতে যাতে রাস্তাটি ডুবে না যায় সেজন্য নানাভাবে সমীক্ষা চালানোর পরই কাজ শুরু হয়েছে। একইভাবে রাস্তার নকশা ও ডিজাইনেও পানির ব্যাপারটিতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
নালা আগের চেয়ে ছোট করার কথা স্বীকার করে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, বর্ষার পানি, জোয়ারের পানি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘরের ব্যবহৃত পানির হিসাব করেই প্রয়োজন অনুযায়ী নালা নির্মাণ করছি। আপাতত নালার গভীরতা কমে যাচ্ছে বলে মনে করা হলেও রাস্তা তিন ফুট উঁচু হয়ে যাওয়ায় নালার গভীরতা বেড়ে যাবে। নালা যাতে ভবিষ্যতে সুষ্ঠুভাবে পরিষ্কার করা যায় সেই ব্যাপারটিও মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। আগের নালা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তাটির প্রস্থ আগের চেয়ে বাড়ছে। ১২০ ফুট চওড়া রাস্তাটি দিয়ে যান চলাচলে যাতে সর্বোচ্চ গতি থাকে, তাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে রাস্তায় ‘মেকাডম’ (বালির সাথে বড় বড় ইটের টুকরা মিশিয়ে রাস্তায় দেওয়া) দেওয়ার কাজটি শেষ করব। তবে বর্ষার আগে রাস্তার কাজ শেষ হবে না। রাস্তায় মেকাডম দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু করব; যাতে বর্ষার সময় মানুষ রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারেন। আবার একই সাথে রাস্তার মাটিও যাতে বসে যায়। রাস্তা পুরোপুরি বসে গেলে বর্ষার পর কার্পেটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করব।
