কানাডা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে তার সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আশ্বাস দেন।

স্থানীয় সময় শুক্রবার হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম।

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া নূর চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় অবস্থান করছেন। সে দেশে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেও্ তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী কানাডা এই দণ্ড পাওয়া নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে হস্তান্তরে এতদিন অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় কানাডার সঙ্গে বৈঠক করে তাদেরকে একটি অবস্থানে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিতে কানাডা কিছুটা নমনীয় হয়েছে।’

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল মোট ১২ জনকে। এদের মধ্যে ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা। আর বাকি ছয় জন এখনও বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন। এদের মধ্যে নূর চৌধুরীর কানাডা ও রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য আছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। তাদের দুইজনকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির দণ্ড কার্যকরে গত ছয় বছর ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

কানাডা সফরেও অন্যান্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে জোর দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জানান, ‘এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নূর চৌধুরীকে কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন দুই দেশের কর্মকর্তারা।’

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিকে দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে আছে। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভভ উদ্যোগ নেয়া হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডা ও রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও বাকি চারজনের বিষয়ে বিভিন্ন সময় ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। তার মধ্যে খন্দকার আবদুর রশিদ পাকিস্তান কিংবা লিবিয়ায়, শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান, আবদুল মাজেদ সেনেগালে ও মোসলেমউদ্দিন জার্মানিতে অবস্থান করছেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে কানাডায় নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন বাতিল হওয়ার পর তার পাসপোর্টটি জব্দ করে অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠিয়ে দেয় কানাডা। ওই সময় তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আগ্রহ দেখিয়ে কানাডা চিঠি দেয়। কিন্তু ঢাকার পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার সুযোগ হাতছাড়া হয়। পরে সর্বোচ্চ আদালত তার মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় এ বিষয়ে আর আগ্রহ দেখায়নি কানাডা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031