চিকিৎসক শারমিন হোসেন রোস্টার মেনে দায়িত্ব পালনের পরও চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন । তিনি কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট। তার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে ‘অনিচ্ছা’র অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ এই চিকিৎসক দাবি করেছেন, তিনি গত ৭ এপ্রিল রাত জেগে হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়েছেন। তারপরও তাকে বরখাস্ত করার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুটি আদেশে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ হিসেবে দেখানো হয় তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছা জানিয়েছেন। বরখাস্ত হওয়া চিকিৎসকরা হলেন- হীরক চন্দ্র রায়, ফারহানা হাসানাত, উর্মি পারভীন, কাওসার উল্লাহ, মুহাম্মদ ফজলুজ হক ও শারমিন হোসেন।
তার একদিন বাদে চিকিৎসক শারমিন হোসেন ফেসবুকে তার নিজের অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিওতে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে সবাই আমার সম্পর্কে জেনে গেছেন আমাকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি কেন সাসপেন্ড করা হয়েছে, আমি তার কিছুই জানি না। এই মাসের এক থেকে সাত তারিখ হাসপাতালে আমার টানা ডিউটি ছিল। যেটা আমি করেছি। শেষদিন (৭ এপ্রিল) আমার নাইট ছিল। রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত টানা ডিউটি করে আমি বাসায় গিয়েছি। বাসায় যাওয়ার পরে আমি আর কিছু জানি না; হাসপাতালে সঙ্গে আমার আর সম্পর্ক ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘৯ তারিখে আমার তত্ত্বাবধায়ক (ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দীন) স্যার আমার সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ না করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। আমি নাকি করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে রাজি না।’ এই নারী চিকিৎসকের দাবি, তিনি এমন কথা হাসপাতালের কাউকেই মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে জানাননি।
ডাক্তার শারমিন বলেন, ‘৮ তারিখ সকাল পর্যন্ত ডিউটি করার পরে কীভাবে একজন তত্ত্বাবধায়ক আমার বিরুদ্ধে অর্ডার তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি স্যারকে পাঠালেন! যা আমি নিজেও ভেবে পাচ্ছি না। আমাকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করার পর আমি জানতে পেরে বিষয়টি জানতে তত্বাবধায়ক স্যারের কাছে যাই।’
‘স্যারকে বলি আমি তো ৮ তারিখ সকাল পর্যন্ত ডিউটি করে বাসায় গিয়েছি। আর করোনা রোগীদের চিকিৎসা করব না এমন কথা কি বলেছি? তখন তিনি (তত্বাবধায়ক) বললেন, না-না, সরি.. সরি.. সরি। এটা ভুল হয়ে গেছে, আমি ঠিক করে দিচ্ছি।’
‘কীভাবে ঠিক করবে আমি কি আবেদন জমা দিবো জানতে চাইলে স্যার বলেন- আমার একটা ফোনই যথেষ্ট। পরে স্যারের সঙ্গে কথা বলে বাসায় চলে আসি। পরদিন স্বামীর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়ে বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতনদের জানাই। ডাইরেক্টর এডমিন স্যারের সাথে কথা বলি। হাসপাতালে টানা ডিউটির রোস্টার, হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন কাগজ জমা দিয়েছি।’
শারমিন বলেন, ‘দায়িত্ব পালন করার পরও একজন চিকিৎসক কীভাবে বরখাস্ত হয় তা জানতে চাই! তার মানে কি সমাজে চিকিৎসকদের কোন মূল্যায়ন নেই? ডাক্তারের কোন সম্মান নাই? বাসার বুয়াকে বিদায় করার আগেও তো চিন্তা করি, তাকে ছেড়ে দিবো, নাকি দিবো না। আর বুয়ারাও তো অনেক সম্মানের সঙ্গে চাকরি করে।’
এই অবস্থায় কি তার চাকরি করা উচিত? জানতে চেয়েছেন চিকিৎসকদের কাছে। বলেছেন, ‘এটা আমার একার কলঙ্ক না, এটা পুরো ডাক্তার সমাজের কলঙ্ক। এটাতে ডাক্তার সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আমাদের উচিত এটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।’
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
