নগরের কোরবানি পশুর হাটগুলোতে দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার ক্রেতা বেড়েছে । তবে বেচাকেনা ছিল তুলনামূলক কম। ক্রেতাদের দাবি, অতিরিক্ত দাম চাচ্ছেন বেপারিরা। তাছাড়া কোরবানির এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি থাকায় গরুর দাম যাচাই করছেন তারা। বিপরীতে বেপারিরা বলছেন, গো খদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম একটু বেশি। অবশ্য বিক্রি কম নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন বাজারের ইজারাদাররা। তারা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত পশু আছে। নগরের কোরবানিদাতারা গরু রাখার জায়গা সংকট ও দেখভালের ঝামেলা এড়াতে শেষের দিকে এসে কোরবানির পশু কিনেন।
নগরে এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী-অস্থায়ী সাতটি পশুর হাট বসেছে। এগুলোসহ পুরো ১৪ উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী হাট বসছে ২৭২টি। এর বাইরে বিভিন্ন খামারে হৃষ্টপুষ্ট করা গরু বিক্রি হচ্ছে। সবখানেই গতকাল ক্রেতার ভিড় ছিল আগের দিনের চেয়ে বেশি।
নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে গরু এনেছেন বেপারিরা। গত রাতেও বিভিন্ন বাজারে ট্রাকে ট্রাকে গরু নামতে দেখা গেছে। এদিকে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকে নিয়ে আসা গরুও গতকাল কয়েকটি বাজারে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বিবিরহাট গরুর বাজারে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০-১২টি গরু বিক্রি হয়েছে বলে ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এর মধ্যে চারটি গরু বিক্রি হয়েছে প্রতিটি আড়াই লাখ টাকা করে। গতকাল বিকালে বাজারটিতে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের মূল মাঠে প্রচুর জায়গা ফাঁকা রয়েছে। অতীতে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা গরুর জন্য বাজারটির মাঠের কোথাও ফাঁকা থাকত না। অবশ্য ইজারাদাররা বলেছেন, এখনো প্রচুর গরু আসার পথে রয়েছে। কাল-পরশুর মধ্যে আরো গরু আসবে।
বিবিরহাট বাজারে কুষ্টিয়া থেকে নিয়ে আসা একটি গরুর দাম চাওয়া হয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মোজাম্মেল নামে একজন ক্রেতা গরুটি দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হন। তবে বিক্রেতা দুই লাখ টাকার নিচে বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
বিবিরহাট গরুর বাজারের ইজারাদারের প্রতিনিধি রেজাউল করিম রিটন আজাদীকে বলেন, প্রচুর ক্রেতা এসেছে। বেশিরভাগই দরদাম করেছেন। কিনেছেন কম। আসলে এখনো সময় আছে। তাই ক্রেতারা গরুর দামের আইডিয়া করছেন। বিক্রেতারাও সময় থাকায় দাম ধরে রাখছেন মনে হলো। গরু বিক্রি কম হলেও গতকাল প্রায় শ’খানেক ছাগল বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সাগরিকা পশুর হাটে গতকাল ৬২টি গরু এবং এক হাজারের অধিক ছাগল বিক্রি হয়েছে বলে ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে পিজিয়ান একটি গরু সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকায়। বাজারটি থেকে গতকাল একটি স্টিল মিল মালিক একসঙ্গে ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ৮টি গরু কিনেছেন।
সাগরিকা পশুর বাজারের ইজাদারের প্রতিনিধি মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বিক্রি মোটামুটি হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সাগরিকা মূল বাজারে ২০টি বিক্রি হয়েছে। এছাড়া আরো ৬/৭টি মাঠেও গরু বিক্রি হচ্ছে। সেখানে কী পরিমাণ বিক্রি হয়েছে তা রাত ১০টার পর জানা যাবে। তবে সেখানেও বিক্রি হচ্ছে।
আগের দিনের চেয়ে গতকাল ক্রেতা বেশি ছিল নুর নগর হাউজিং সোসাইটি গরুর বাজারে। এ বাজারে ‘লাল বাদশা’ নামে একটি গরুর দাম চাওয়া হয় ৫ লাখ টাকা। ১২ মণ ওজনের গরুটি নিয়ে এসেছেন কুষ্টিয়ার বেপারি রোজদার মণ্ডল। তিনি আরো ১৫টি গরু নিয়ে এসেছেন। এসব গরুর দাম দাবি করেছেন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত।
এ বাজারে কথা হয় ক্রেতা সাবের আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেখতে আসলাম। দরদাম হলে কিনব। তবে দাম বেশি চাচ্ছে।
উল্লেখ্য, নগরে বসা সাত পশুর হাটের চারটি অস্থায়ী। এগুলো হচ্ছে কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার, পতেঙ্গা লিংক রোড সংলগ্ন খেজুরতলা মাঠ এবং ৪১ নং ওয়ার্ড বাটারফ্লাই পার্কের পাশে। এছাড়া তিনটি স্থায়ী পশুর হাট হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031