ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলের অতিথিদের কড়া নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এ তালিকায় আছেন দেশি ও বিদেশি অতিথিরা। কখন কে আসছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, এসব নিয়ে কাজ করছেন দেশের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা। এর বাইরেও অতিথিদের ওপর নজর রাখছে আরেকটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা। কড়া নজরদারির পাশাপাশি ওইসব অতিথির নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখছেন গোয়েন্দারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দারা। আগে প্রতিটি পাঁচ তারকা হোটেলে অন্তত দুইজন গোয়েন্দা কাজ করতেন। বর্তমানে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ জন-এ। অনলাইন বুুকিং তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মোট ৭টি পাঁচ তারকা মানের হোটেল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- হোটেল ওয়েস্টিন, হোটেল সোনারগাঁও, রেডিসন, সিক্স সিজন, রিজেন্সি, প্লাটিনাম স্যুইট এবং হোটেল লেকশোর। এমন আরো দুটি হোটেলের নির্মাণকাজ চলছে। পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে গোয়েন্দারা কাজ করছেন নিবিড়ভাবে। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা জানান, দু’টি বিষয় সামনে রেখে তারা কাজ করেন। প্রথমত বিদেশি অতিথিদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হয়। কোন দেশ থেকে আসছেন, কি কাজে আসছেন, বাংলাদেশে এসে কাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সেগুলো বিস্তারিত জানা হয়। ভিআইপি বিদেশি অতিথি হলে তার গন্তব্যস্থলগুলোতে সাদা পোশাকের নিরাপত্তা কর্মীরা নজরদারির মধ্যে রাখেন। তাদের যেন নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়। আবার অন্যান্য বিদেশি অতিথিদের শুধু কর্মকাণ্ড নজরদারি করা হয়। ওইসব অতিথিরা বাংলাদেশে কাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তা খতিয়ে দেখা হয়। দেশের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা হয়। কোন বিদেশি অতিথির মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। গোয়েন্দারা জানান, সন্দেহজনক কিছু পেলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাংলাদেশি দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। তারপর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। গত কয়েক মাসে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে বলে জানান হোটেল সোনারগাঁওয়ে দায়িত্বরত গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য। তিনি বলেন, কড়া নজরদারির মূল উদ্দেশ্য জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। আমরা হোটেলে সন্দেহজনক কিছু দেখলে তাৎক্ষণিক কোন পদক্ষেপ নিতে পারি না। শুধু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আনি। বাকি পদক্ষেপ তারা নেন। এদিকে দেশি অতিথিদের প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা জানান, দেশি অতিথিদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হয় না। তবে তারা কাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, কী করছেন তা নজরদারি করা হয়। দেশি অতিথিরা বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে কোন বৈঠক করছেন কিনা বা তাদের সঙ্গে কোথাও যাচ্ছেন কিনা সেসব দেখা হয়। গোয়েন্দারা জানান, বিদেশি সাংবাদিকরা এসব হোটেলে উঠলে সেটাও খতিয়ে দেখা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট দিতে হয়। সংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা জানান, ২৪শে আগস্ট বৃহস্পতিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে অতিথি তালিকা থেকে একজনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে রিপোর্ট করতে হয়েছে। ভারতে বিবিসি’র হয়ে কাজ করা এক সাংবাদিক ওই হোটেলে ওঠেন। তার গতিবিধির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়। ২৭শে আগস্ট সকাল ৭টায় তিনি হোটেল ত্যাগ করেন বলে গোয়েন্দাদের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আগামী ৩ দিনে কারা আসছেন সে তালিকা নিয়ে কাজ করা হয়। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে কারা রুম ভাড়া নিচ্ছেন সেটাও দেখা হয়। ওদিকে আলাদা নজরদারি রাখা হয় হোটেলগুলোর লবিতে। সেখানে কারা আসেন, কারা বসেন, কতক্ষণ মিটিং করেন তা নজরদারি করা হয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমান টেলিফোনে মানবজমিনকে বলেন, পাঁচ তারকা হোটেলে ওটা দেশি-বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তার বিষয়টি কেবল আমরা দেখি। তাদের ওপর নজরদারি করি না। অন্য কোনো সংস্থা এটা করতে পারে। তিনি বলেন, আসলে হোটেলগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এদিকে ওয়েস্টিন, সোনারগাঁওসহ কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবজমিনকে জানান, দুই শিফটে গোয়েন্দারা এখানে কাজ করেন। প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে গোয়েন্দারা আমাদের কাছ থেকে অতিথি তালিকা নেন। এর বেশি আমাদের আর কিছু বলার নেই। তবে কোনো অতিথি নিয়ে হোটেলে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তারা। এ বিষয়ে গোয়েন্দারা তাদেরকে সব সময় পূর্ণ সহযোগিতা করেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031