আপাতত জলাবদ্ধতা নিরসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকলেপর মনিটরিং কমিটির সভায় খালগুলো দ্রুত সংস্কার করে ।
সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি আপনারা যারা পাহাড় থেকে মানুষকে সরিয়ে দেবেন। আমি সেই বস্তিবাসীকে পুনর্বাসিত করবো আমার নিজের টাকায়। সরকারি টাকা না। আমার নিজস্ব টাকা। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের টাকা। আমি ১০ হাজার এপার্টমেন্ট করছি। সমস্ত বস্তিবাসী থাকতে পারবে। চিটাগাংয়ে আমার দায়িত্ব আছে। আর যেন পাহাড় কাটা না হয়।
সিডিএর (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) বাস্তবায়নাধীন ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির প্রথম সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল রবিবার সকালে সিডিএর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় মন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। সভা পরিচালনা করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদুল্লাহ খোন্দকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, আমরা বর্ষা মৌসুমের আগে জলাবদ্ধতাকে যাতে কমিয়ে আনতে পারি সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে খালগুলো আছে সেগুলো সংস্কার করা, যেগুলো ভরাট হয়ে আছে সেগুলো পরিষ্কার করা যাতে করে পানি দ্রুত নেমে যায়। আমরা কিছু স্লুইস গেট বানাবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা যদি রাত–দিন কাজ করি তবে এর সুফল পাবো। আগামী বর্ষা মৌসুমে রাস্তার ওপর যেনো নৌকা না চলে এটাই হলো আমাদের এখনকার কাজ। এরপর তো আমাদের পারমান্যান্ট (স্থায়ী) কাজ ইনশাল্লাহ সব হয়ে যাবে।
কর্পোরেশনের খাল খনন : মন্ত্রী বলেন, যারাই সিটি কর্পোরেশনে যায় তারা একটা এসকেবেটর নিয়ে যায়। গিয়ে কতগুলো বালি তুলে আর ছবিটা তুলে আজাদীতে দিয়ে দেয়। খাল পরিষ্কার হচ্ছে। এটা চট্টগ্রামবাসীকে দেখায়। একটা এসকেবেটর নিয়ে যায়, একটু মাটি তোলে। এরপর আজাদী বা অন্য পত্রিকাকে ছবি তুলে পাঠায়। আবার সেই বালিই বালি। আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কাজ করছি। যাতে করে সত্যিকার অর্থে খাল খনন হয়। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয়।
সিডিএর অনিয়ম : সিডিএ চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে মোশাররফ বলেন, সিডিএর অনিয়ম হলো, সিডিএর পারমিশন না নিয়ে অনেকে স্থাপনা করেন। কিন্তু আপনারা সেটা নিশ্চিত করেন না। আমি কি জিজ্ঞাসা করতে পারি, আপনারা তাদেরকে কোনো নোটিশ দিয়েছেন ? না, আমি মনে করি না। আপনারা কাউকে কিছু না জানিয়ে বৃহস্পতিবারে এগুলো লিস্ট করেন এবং শনিবারে বিকেলে শেষ করে (ভেঙে) দেন। আর একটা কথা, সিডিএর ওপর আপনার একটা দায়িত্ব আছে বিরাট। সেই দায়িত্বটা হলো, পাহাড় কাটা বন্ধ করা। নালা থেকে মাটি আসে সেটা থেকে বালি হয়। আমরা পাহাড়ি অঞ্চল। আমাদের পাহাড়গুলো বালির পাহাড়। যখন বৃষ্টি হয় তখন বালি ধুয়ে আসে। কেন আসে, পাহাড় কাটে মানুষ থাকে। আমি কেন পাহাড় কেটে মানুষকে থাকতে দেবো। আমার সিডিএর লোক থাকে না, সিডিএর ইনস্পেক্টর যায় না বাধা দেয় না পাহাড় কাটায়। এমনও পাহাড় আছে যেখানে বুলডোজার দিয়ে পাহাড় কাটছে, কিন্তু সিডিএর লোক যায় নাই। এতে দেখা যায়, যখন বৃষ্টি হয়, অনেক লোক মারা যায় পাহাড়ধসে। তাতে কি হয় বালুময় পাহাড় থেকে বালু এসে নালাগুলো ভরাট হয়ে গেলো। তাতে পানি উপচে পড়ে। এখানে আপনার সিটি কর্পোরেশন কতো নালা পরিষ্কার করবে, বালি পরিষ্কার করবে। মানুষকে না আসতে দিলেই হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদুল্লাহ খোন্দকার বলেন, আমাদের এখন যে সময় এবং সামনের বর্ষা মৌসুম আসছে, অল্প সময়ের মধ্যে যে কাজটি সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো যেটা করলে চট্টগ্রামের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা যাবে সেই উদ্দেশ্যে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে খালগুলো ভরে গেছে, যেগুলোর সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন যাবত সেই খালগুলোকে দ্রুত সংস্কার করে আপাতত জলাবদ্ধতা নিরসন। সবাইকে এর গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আজকের এই সভা। এখন আমরা যেটুকু করতে পারবো, যেটা করলে নগরবাসীকে কিছুটা হলেও জলাবদদ্ধতা হতে মুক্ত করতে পারবো। এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এ সভা ডাকা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাত্র ৫ দিনের মাথায় মনিটরিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সভাটি ঢাকা শহরে না করে এখানে করা হয়েছে যাতে মন্ত্রী মহোদয় চট্টগ্রামে আসলে এ ব্যাপারে সবাই মিলে অফিসে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়, সময় নষ্ট না হয়।
সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুছ ছালাম বলেন, আমরা যখন দেখলাম বর্ষা অতি সন্নিকটে আমরা এলাকা চিহ্নিত করেছি। আগ্রাবাদ, হালিশহর, দেওয়ানবাজার, চকবাজার, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, বহদ্দারহাট। আমরা দেখেছি, গত বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এসব এলাকায় একটা দৃশ্যমান পরিবর্তন আনার জন্য আমরা ১৬টি খাল নিয়ে যদি কাজ করতে পারি তাহলে নি¤œাঞ্চলের যে জলাবদ্ধতা তা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। তিনি জানান, প্রকল্প অনুমোদনের তিনমাসের মধ্যে সিডিএ ৫৭টি খালের সার্ভের কাজ শেষ করেছে এবং ১৬টি খালের ডিটেইল ডিজাইনের কাজ আমাদের কনসালটেন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে।
পরে সিডিএ চেয়ারম্যান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সেগুলোর ওপর পর্যালোচনার ভিত্তিতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউল মজিদ বলেন, আমি মনে করি, খাল খনন টেকনিকেল বিষয়। এটা নির্ধারণ করবে কনসালটেন্ট। কনসালটেন্ট কি দেখে করবেন, বালি কোথায় জমা হচ্ছে, স্লোব কোন দিকে যাচ্ছে, পানি কোন জায়গা থেকে কোথায় নামলো এটা টেকনিকেলি দেখতে হবে। আমি মনে করি, ১৬টি খাল খনন হবে না ১০টি হবে, না ৪টি হবে এখনো আমাদের সেটি বিবেচনার সময় আসেনি। আমরা কনসালটেন্টদের সঙ্গে বসে এ বিষয়টি নির্ধারণ করতে পারবো। কারণ আমরা একটা ইমপেক্ট চাচ্ছি। জলবদ্ধতা নিরসন একটা সহনীয় পর্যায়ে আনা যায় সেটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয় এখন। এ কাজ নির্ধারণ হবে সময়, অর্থ এবং টেকনিকেল কমিটির মতামতের ভিত্তিতে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা কাজটা শুরু করবো, যত তাড়াতাড়ি এই সিজনে এটার সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া যায় সেটাই দেখতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিচালন) জাফর আলম বলেন, পানির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে কনসালটেন্টের ওপর নির্ভর করতে হয়। কনসালটেন্টের সঙ্গে আবার কনসাল্ট করতে হয় স্টেকহোল্ডারদের। ১৬টি খালের বিষয় যখন এনালাইসিস করা হবে তখন বুঝা যাবে এর গুরুত্ব।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, আমাদের মাস্টারপ্ল্যানে প্রতিটি খালের প্রশস্ততা কতো, কোথা থেকে শুরু হয়েছে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে, কোন্ কোন্ খালে কি কি এফেক্ট আছে তা বলা হয়েছে, খালের মাপ–পরিধি, কমেন্টসগুলো দেয়া আছে কোথায় কি করতে হবে, না হবে। ড্রয়িং–এ ডিটেইল দেয়া আছে। তাই আমরা কিন্তু এটা স্টাডি করে খুব দ্রুত কাজ করতে পারি।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বেশ কয়েকদিন থেকে কাজ করছি। এর মধ্যে চাক্তাই খালের কাজ ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। পাড় বাঁধাই হয়ে গেছে। হিজরা, মির্জা, নয়াখালের কাজও ৫০ শতাংশ হয়ে গেছে। মহেশখাল আপনারা দেখবেন, বিগত বছর মহেশখালে বড় বড় কতগুলো গাছ, বর্জ্যে ভরে ছিল। এখন সেখানে সেই আবর্জনা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন ড্রেজিংয়ের কাজ করতে হবে। গত বর্ষার সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যদি এগিয়ে যাই আমি মনে করি, একটা ভালো সমাধানে আমরা পৌঁছাবো।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী একেএম সামশুল করিম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ উল হাসান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন, চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান প্রমুখ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031