বিভিন্ন সূত্রে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে। বনানী থানায় মামলা করতে গিয়ে দুই তরুণী যখন দীর্ঘ সময় পুলিশ হেফাজতে ছিলেন, সেদিনই সাফাত বিদেশে পালান বলে সূত্র জানায়।
এদিকে মামলার পর থেকে বাসায় একরকম বন্দি হয়ে আছেন ওই দুই ছাত্রী। আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে বলে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকাটাইমসকে জানান তাদের একজন।
তবে পুলিশ বলছে, সাফাত দেশেই আছেন। মামলা রেকর্ড হওয়ার দিন থেকেই সাফাতসহ অভিযুক্তদের খুঁজছে তারা। আর তিন দিন পর আজ মঙ্গলবার সাফাতের গুলশানের বাসায় তার খুঁজে অভিযান চালায় পুলিশ।
সাফাতের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, গত ৬ মে সাফাত বিদেশে চলে গেছেন। তার পাসপোর্টে যুক্তরাজ্যের মাল্টিপল ভিসা লাগানো ছিল। তবে এসব তথ্যের সত্যতা যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, তার ছেলে সাফাত গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত বাসায় ছিলেন। তবে রাতে বেরিয়ে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি।
আজ মঙ্গলরবার বিকাল পর্যন্ত পুলিশ এই ধর্ষণ মামলার পাঁচ আসামির একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আসামিরা হলেন নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।
সাফাতের বাবার দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন। সাফাতসহ অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছে। সাফাতের বাবা কেন এসব কথা বলছেন তা তিনি জানে না।
আবদুল মতিন আরো জানান, শুধু বনানী থানার পুলিশ নয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দারাও সাফাতের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, তারা ছায়া তদন্ত করছেন। আসামিরা দেশে আছেন। তাদের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে।’
সাফাত আহমেদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় স্নাতক পাস করে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন সম্প্রতি।
সূত্র জানায়, এই মামলার তিন নম্বর আসামি সাদমান সাকিফ দেশে আছেন। তার বাবা মোহাম্মদ হোসেন জনি বলেন, ছেলে কোথায় আছেন তা তিনি জানে না। ঘটনার দিন বিদেশে একটি আইটি ফেয়ারে অংশ নিয়ে সাদমান দেশে ফেরেন।
রেগনাম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে সাদমানের মাধ্যমে সাফাতের সঙ্গে পরিচয় হয় নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্রীর।
ধর্ষণ মামলার দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ ইমেকার্স নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম চালান।
মামলার এজাহারে জানা যায়, ঢাকার দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রী গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন। ওই রাতে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে তাদের ধর্ষণ করেন সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ। ধর্ষণের দৃশ্য ধারণ করেন সাফাতের গাড়িচালক।
লোকলজ্জার ভয়ে প্রথমে মুখ না খুললেও আরও বেশি হয়রানির ভয়ে তারা থানায় মামলা করতে যান।
নির্যাতিত দুই ছাত্রীর একজন, যিনি গুলশানেরই একটি এলাকায় থাকেন,একে তো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ভয়। বাড়িতে একরকম বন্দি ও নজরদারির মধ্যে আছেন। বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না তিনি।
