যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় মাত্র ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং দুই জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে সামাজিক সংক্রমণের কথা বলা হয়েছে। অথচ বিশ্বাস করুন বা না করুন ইতালি এবং স্পেনের মতো দেশ, যেখানে দেড় লাখের বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিদিনের পরিস্থিতি প্রতিবেদনে সামাজিক সংক্রমণের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
কীভাবে এটা সম্ভব? ৯ এপ্রিল থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেশগুলো তাদের সংক্রমণের যেসব সংজ্ঞা দেয় তা জানিয়েছে। সেই অনুযায়ী সামাজিক সংক্রমণ হওয়া ২২টি দেশের মধ্যে নেই ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাজ্য। এসব দেশ এমনকি ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই অমিমাংসিত ক্যাটাগরিতে নিজেদেরকে তালিকাভুক্ত করেছে।
এই তারিখের আগে দেশগুলোর ব্যাপারে শুধুমাত্র আক্রান্ত ও মৃত্যুর বিষয়ে অফিসিয়াল তথ্য বিশ্লেষণ করত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। একটি পরিস্থিতি প্রতিবেদনে দেশগুলোর নির্দিষ্ট আক্রান্ত সংখ্যা, নতুন আক্রান্ত এবং মোট মৃত্যুর বিষয়টি তালিকাসহকারে রাখা হয়েছে। দেশগুলো প্রতিদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে একটি স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাটে বিস্তারিত তথ্য পাঠায়।
সংক্রমণ পরিস্থিতির বিশ্লেষণ ৯ এপ্রিলের পর থেকে পরিবর্তন করা হয়েছে। এর আগে সংক্রমণের যে দৃশ্য বিবরণী ছিল সেগুলো হলো- ১) তদন্তাধীন, ২) আমদানি হয়েছিল, ৩) স্থানীয় সংক্রমণ, ৪) সামাজিক সংক্রমণ, ৫) বিঘ্নিত সংক্রমণ, তবে বিঘ্নিত সংক্রমণ কীভাবে হয় তার বিস্তারিত জানানো হয়নি।
৯ এপ্রিলের পরের সংক্রমণ পরিস্থিতি হলো- ১) কোনো আক্রান্ত নেই, ২) বিক্ষিপ্ত ক্ষেত্রে, ৩) গুচ্ছভিত্তিক আক্রান্ত এবং সামাজিক সংক্রমণ। বিক্ষিপ্ত ক্ষেত্রকে আমদানিকৃত এবং স্থানীয় সংক্রমণের সংমিশ্রন বলে মনে করা হচ্ছে। গুচ্ছভিত্তিক মামলাকে দেশ বা অঞ্চল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে। তবে সামাজিক সংক্রমণের সংজ্ঞা কমবেশি একই থেকেছে।
নতুন স্বপ্রতিবেদন ফরম্যাটে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ২১৫ দেশ ও অঞ্চল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তথ্য প্রেরণ করেছে। তারা তাদের সংক্রমণ পরিস্থিতিকে গুচ্ছ মামলা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। এর মধ্যে চীনের রয়েছে ৮৩ হাজারের বেশি মামলা এবং ৩৩০০ এর বেশি মৃত্যু, ভারতের ৮০০০ হাজারের বেশি মামলা এবং ২৭৩ মৃত্যু। এমনকি মালদ্বীপ ও গ্রানাডায়ও ১৯ ও ১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এর মধ্যে সামাজিক সংক্রমণের ২২টি দেশের বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল ও মেক্সিকোসহ আমেরিকা অঞ্চলে রয়েছে। তবে এর মধ্যে ওই অঞ্চলের বাইরের দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার ২০৮৮ জন আক্রান্ত এবং ২৫ জনের মৃত্যু ও সিরিয়ায় মাত্র দুটি মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে।
প্রায় ৬০টি দেশ ‘বিক্ষিপ্ত’ শ্রেনিতে রয়েছে। এসব দেশে আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। এই শ্রেণিতে নিউজিল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি ১০৭৯ জন আক্রান্ত এবং একজন নতুন আক্রান্ত ও চারটি মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে। আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ এই শ্রেণিতে রয়েছে।
এছাড়া ৪৯টিরও বেশি দেশ বেশিরভাগই ইউরোপের অমিমাংসিত শ্রেণিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারও রয়েছে। গালফ দেশগুলোর মধ্যে এই দুটি দেশ হটস্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
যদিও সংক্রমণের বিভিন্ন দিক এবং বিভিন্ন অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ দেশ এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। একেক দেশে একেকভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্বাস প্রতিটি দেশ করোনা সংক্রমণের বিষয়ে সঠিক শ্রেণিবদ্ধকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
