গত ৮ মাসে করোনা ডেডিকেটেড ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পজেটিভ রোগীর চেয়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনগুণ বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে । গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে ২রা মে থেকে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১ হাজার ৮৬০ জন রোগী মারা গেছেন। এই সময়ে পজেটিভ রোগী মারা গেছেন ৬৫৫ জন। হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, ঢামেকে করোনা পজেটিভ ও উপসর্গ আছে এমন রোগীদেরও ভর্তি নেয়া হয়। ঢামেকে আসা বেশির ভাগ রোগীরা ঢাকার বাইরে থেকে আসেন। হাসপাতালে আসার আগেই রোগীদের অবস্থা সংকটাপন্ন থাকে। এখানে আসার পর পরই রোগীদের মৃত্যু হয়।

যেসব রোগী মারা যাচ্ছেন এসব রোগীদের অন্যান্য জটিল রোগ থাকে। এ ছাড়া করোনার শুরুর দিকে নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল ছিল। শুধুমাত্র ঢামেকেই নন কোভিড রোগীদের ভর্তি নেয়া হতো। তাই রোগীরা অসুস্থ হওয়ার পর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে কোথাও ভর্তি হতে না পেরে শেষ মুহূর্তে ঢামেকে আসতেন।

ঢাকা মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনার বিস্তার শুরু হওয়ার পর ২রা মে হাসপাতালটির বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে প্রথম করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কিছুদিন পরে হাসপাতালটির নতুন ভবনের সবক’টি ওয়ার্ডে করোনা শয্যার ব্যবস্থা করা হয়। সবমিলিয়ে ঢামেকে ৮৮৩টি করোনা শয্যা রয়েছে। এসব শয্যায় গত আট মাসে রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজার ৯৫৬ জন। এরমধ্যে ৮ হাজার ৬৪৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ৬৫৫ জন করোনা পজেটিভ রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। ১ হাজার ৮৬০ জন রোগী করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫৫৬ জন পজেটিভ রোগী ভর্তি আছেন।
হাসপাতালসূত্রে আরো জানা গেছে, অক্টোবর মাসে হাসপাতালে ভর্তি পজেটিভ রোগীদের মধ্যে মারা যান ৭৫ জন। ওই মাসে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান ১৪৯ জন। নভেম্বর মাসে পজেটিভ রোগী মারা যান ৫৩ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা যান ১৮৭ জন। চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত পজেটিভ রোগী মারা গেছেন ৭৯ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৯৩ জন। পরিসংখ্যানটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় চলতি মাসে পজেটিভ ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু দুটাই বেশি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক মানবজমিনকে বলেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন এমন রোগীদেরও করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগই নেগেটিভ রেজাল্ট আসছে। পজেটিভের সংখ্যা খুব কম। রোগীর উপসর্গগুলো করোনার, তাকে চিকিৎসাও সেভাবে দেয়া হচ্ছে কিন্তু রেজাল্ট নেগেটিভ আসায় এসব মৃত্যুর হিসাব পজেটিভের তালিকায় উঠানো যায় না। এসব কারণে পজেটিভের চেয়ে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর হিসাবটা একটু বেশি।
ওদিকে করোনা ডেডিকেটেড মুগদা জেনারেল হাসপাতালে এপ্রিল মাস থেকে করোনা পজেটিভ রোগীদের চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে। এই ৯ মাসে হাসপাতালটিতে সর্বমোট ৪ হাজার ৭২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৪৯৫ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ৪৪৬ জন রোগী। এরমধ্যে এপ্রিল মাসে মারা যান ১৬ জন, মে মাসে ৬০ জন,  জুন মাসে ৭৭ জন, জুলাই মাসে ৪৭ জন, আগস্ট মাসে ৬০ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৫৩ জন, অক্টোবর মাসে ৬০ জন, নভেম্বর মাসে ৫৯ জন ও চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ৬৩ জন রোগী মারা গেছেন।
অন্যদিকে বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৮ই মে থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালটির প্রশাসন সূত্র জানায়, ২৭শে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৪২৬ করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ২ হাজার ৩৮৭ জন। এই সময় পর্যন্ত হাসপাতালটিতে করোনা পজেটিভ ২৩৩ জন রোগী মারা গেছেন। আর গত ৭ দিনে মারা গেছেন ১২ জন। হাসপাতালটির গত ৭ দিনের মৃত্যুর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২৭শে ডিসেম্বর ১ জন, ২৬শে ডিসেম্বর ১ জন, ২৫শে ডিসেম্বর ৩ জন, ২৪শে ডিসেম্বর ১ জন, ২৩শে ডিসেম্বর ১ জন, ২২শে ডিসেম্বর ১ জন এবং ২১শে ডিসেম্বর মারা গেছেন ৪ জন।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের উপ- পরিচালক (বর্তমান ইনচার্জ) ডা. মো. আবুল হাশেম শেখ মানবজমিনকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন এক দুইজন করে রোগী মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সংখ্যা খুবই কম। বর্তমানে হাসপাতালে ১০৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। করোনা টেস্টের দুটো বুথ মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক পরীক্ষার সক্ষমতা আমাদের আছে। অথচ গড়ে ১০০ পরীক্ষা হয় না। কারণ মানুষ এখন করোনা পরীক্ষা করাতে আসে না।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031